প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে প্রাথমিক শিক্ষকরা। আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবি না মানলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতারা।

প্রাথমিকের এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এই তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার প্রসঙ্গ তোলেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সচিব এর সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত প্রধান শিক্ষকদের ১১তম আর সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড দেওয়া হবে। আমরা নতুন নিয়োগ বিধির সুপারিশ করেছি। ওই নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন হলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারদের পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত হবে। সেটা হলেই আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের স্কেল আপগ্রেড করে ১০ গ্রেড করতে পারবো।’

বৈঠকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে গঠিত সংসদীয় সাব কমিটির সর্বশেষ কার্যক্রম কমিটিতে তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, বৈঠকে সাব কমিটির একাধিক সদস্য মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষাবঞ্চিত ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের (১৫+) ৬ মাসের শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে নিজের নাম লেখাসহ স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন (পত্রিকা পড়ার মতো) করে তোলার কথা থাকলেও সেটা আদৌ হচ্ছে না। কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ না হলেও চলমান প্রকল্পের অর্ধেক টাকা ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে। বাকি টাকা ছাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সাব কমিটি এসব প্রকল্প এলাকার শিক্ষাকেন্দ্রগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেবে। এর আগে টাকা ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব কমিটির সদস্য আলী আজম বলেন, ‘আমরা সাব কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছি। সবগুলোতে সম্ভব না হলেও আমরা দৈবচয়নের মতো করে কতগুলো কেন্দ্রে যাবো। তারপর সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দেবো। আমাদের প্রতিবেদন না দেওয়ার আগে তাদের টাকা ছাড় না দিতে বলা হয়েছে।’ বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের ৬৪ জেলায় চলমান মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তদারকির মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে।

প্রসঙ্গত, কমিটির আগের বৈঠকে (১৮ সেপ্টেম্বর) মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের কর্মকাণ্ড নিয়ে কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। ওই সাব কমিটিকে দেশের চলমান মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের কার্যক্রম ও নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী রিডিং পড়তে পারে কিনা, সেই বিষয়ে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের অধীনে দেশের ৬৪ জেলার ১৩৪টি উপজেলার ২১ লাখ শিক্ষার্থীকে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার কথা রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর তত্ত্বাবধানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো (এনজিও) এসব শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, বৈঠকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে সভাপতি প্রার্থীর সন্তানকে অবশ্যই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। স্থায়ী কমিটি এই সুপারিশ করেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।