প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পিতামাতার অবর্তমানে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা প্রবর্তনের কাজ চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলফা ইন্স্যুরেন্সের যোগদানের তারিখ ১ মার্চ। এ দিনটিকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবনা রয়েছে। এটা আমরা বিবেচনার কথা ভাবছি।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র বীমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তি, পরিবার ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের ঝুঁকি কমিয়ে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান বীমা করে থাকে। জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিতে নিরাপত্তা দেয় বীমা।

দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগের জন্য তহবিল সৃষ্টি করে। ধনী ও দরিদ্র সবার জন্য বীমা প্রয়োজন। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বীমা শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা সরকার গঠনের পর এ খাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিই।

১৯৩৮ সালে প্রণীত বীমা আইনকে যুগোপযোগী করে ২০১০ সালে নতুন আইন প্রণয়ন ও চালু করি। আগের কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অবলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করি।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় দেশের কল্যাণে কাজ করি। তবে আমাদের দেশের মানুষের বীমা করার অভ্যাসটা একটু কম। এমনকি একসময় আমি জীবনবীমা করার পর সেই কাগজপত্র যে কোথায় হারাল, তা আর খুঁজে পাই না।

অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমা নিশ্চিতে বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতির বিবেচনায় নিয়ে এবং সার্বিকভাবে জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য কৃষিবীমা চালু করা হয়েছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা তা করব। আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিদেশে কাজ করে। প্রবাসী কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এতে প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মীর বীমা ঝুঁকি নিশ্চিত করা হবে। এ বীমার আওতায় একজন প্রবাসী সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা সুবিধা পাবেন।

বীমা দাবি নিষ্পত্তি বীমা শিল্পের একটি পুঞ্জীভূত সমস্যা মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যা থেকে বীমা শিল্পকে কীভাবে রক্ষা করা যায় এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

যার ফলে বীমা শিল্পে বিগত দুই বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দাবি নীতিতে কর্তৃপক্ষের জিরো টলারেন্স বাজায় থাকায় দাবি নিষ্পত্তির হার আগের চেয়ে বেড়েছে।

তবে বাস্তবতা হলো তথ্যের অপর্যাপ্ততা বীমা গ্রাহকদের জন্য বড় সমস্যা। যার ফলে কয়টি কিস্তি জমা হয়েছে, কিস্তির টাকা কার্যালয়ে জমা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আসলে গ্রাহকরা জানে না, জানতে পারে না।

ফলে বীমা শিল্পের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ কমে যায় এবং এক ধরনের অনাস্থা সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রবিশেষে গ্রাহকরা প্রতারিত হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত মেসেজিং প্লাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে, যা বীমা শিল্পে ইউনিফায়েড মেসেজিং প্লাটফর্ম বা ইউএমপি নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রতি বছর সব বিভাগীয় শহরে বীমা মেলারও আয়োজন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন শহরে উঁচু ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এ ভবনে অগ্নিকাণ্ড থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির আর্থিক নিরাপত্তা সৃষ্টির জন্য ভবন বীমা প্রচলনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।

বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, এমন ২৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বীমা শিল্পের লেনদেনের স্বচ্ছতা আনার জন্য ১০ হাজার টাকার সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সব বীমা কোম্পানিকে তাদের তথ্যের হালনাগাদ, অনিষ্পন্ন বীমার তালিকা প্রদর্শন করারও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, জীবন বীমা কর্তৃপক্ষ, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যক্রম ২০১৮ সাল থেকে চলমান রয়েছে।

উৎপাদন ও অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আরো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, শুধু মুনাফা অর্জনের দিকে না তাকিয়ে সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেটার প্রতি আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।

সেটাই আমরা চাই। বীমা শিল্পকে মানবিক কারণে কাজে লাগানো একান্ত অপরিহার্য। টেকসই উন্নয়নের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো শক্তিশালী হচ্ছে। দেশের মানুষ আজকে ধীরে ধীরে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে আসছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। এটাকে ১৬ ও ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বীমা শিল্পের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জাতির পিতা মন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর ’৫৭ সালে তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হলে ওই বছরের ১২ অক্টোবর জাতির পিতাসহ অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর ১৯৫৯ সালে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। তখন দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, ঢাকার বাইরে যেতে পুলিশকে রিপোর্ট করে যেতে হতো।

সেই সময় তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সের আঞ্চলিক শাখাপ্রধানের দায়িত্ব নেন। বলতে গেলে প্রথম চাকরি জীবন শুরু হয়, আর আমাদের জন্য সৌভাগ্য ছিল বাবাকে খুব কাছ থেকে আপন করে পেতে শুরু করলাম। যদিও সে সৌভাগ্য বেশিদিন টেকেনি। তিনি যেহেতু আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নিয়েছিলেন, তাই আমি বলতে পারি আমিও এ পরিবারের সদস্য ও সন্তান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।