বগুড়া, যশোর ও শেরপুরে তিনটি পৃথক ঘটনায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চারজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় দুইজন, যশোরে একজন এবং শেরপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত ও চার পুলিশ সদস্য আহত হন।

শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, জেলার শেরপুর উপজেলায় দুইদল সন্ত্রাসীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তারা হলোÑ ধনেশ ওরফে সুকুমার সরকার ও

আফজাল হোসেন।
গত মঙ্গলবার রাত দেড়টায় উপজেলার ভবানীপুর বাজারের পূর্বপাশে ব্রিজের ওপর এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, নিহতদের মধ্যে ধনেশ ওরফে সুকুমার সরকার পেশাদার ডাকাত এবং আফজাল হোসেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা) সক্রিয় সদস্য। দেশের বিভিন্ন থানায় আফজালের ২০ ও ধনেশের নামে ১১ মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। গাইবান্ধা সদরের কাঁচদহ গ্রামের মন্টু সরকারের ছেলে ডাকাত ধনেশ ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল গ্রামের রজব আলীর ছেলে সর্বহারা আফজাল হোসেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি পাইপগান ও দুই রাউন্ড কার্তুজ (বন্দুকের গুলি) উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, রাত দেড়টায় শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর বাজারের পূর্বপাশের ব্রিজের ওপর দুইদল সন্ত্রাসীর গোলাগুলি চলছিল। এ সংবাদ পেয়ে তিনি শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, শেরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম ও টহল পুলিশের দল ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ধনেশ ও আফজাল হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মরদেহ ওই হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, দেশের বিভিন্ন থানায় আফজালের নামে ২০ ও ধনেশের নামে ১১ মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বগুড়ার শেরপুর থানায় পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী।

যশোর অফিস জানায়, যশোর রাজগঞ্জ সড়কের মাহিদিয়া এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক যুবক নিহত হয়েছে। বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শুটারগান ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।

নিহত শিশির ঘোষ (৩০) যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়ার নিত্য ঘোষের ছেলে। শিশিরের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ হাফ ডজন মামলা রয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের শংকরপুর মুরগিফার্ম এলাকা থেকে শিশিরকে বোমাসহ আটক করা হয়। তাকে থানায় এনে জিঙ্গাসাবাদকালে তার হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে জানায়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার ভোরে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের মাহিদিয়া কাবিলের ইটভাটার কাছে গেলে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা শিশিরের সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয় শিশির। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশিরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা: শহিদুল্লাহ জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।

শেরপুর সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রুহুল আমিন রিপন (২৬) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার ভোরে সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট সংলগ্ন কড়ইতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের এএসআই আরিফুল হকসহ (৩৩) চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত অন্য তিন পুলিশ সদস্য হলেন মো: হারুন অর রশিদ (২৮), মো: রুবেল মিয়া (৩২) ও মো: সোলায়মান (৩৫)। নিহত ওই যুবক জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী কালু মিয়ার ছেলে। তিনি বিয়ে করার পর থেকে শেরপুর পৌরসভার মীরগঞ্জ মহল্লায় বসবাস করত। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদকসহ অন্যান্য একাধিক মামলা রয়েছে। নিহত যুবক শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিল। আহত চার পুলিশ সদস্য শেরপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্য দিকে নিহতের ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, কড়ইতলা এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে মাদক বেচাকেনা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে সংবাদ পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার পর এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ওই যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জেলা হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম রুহুল আমিন রিপন। তার বিরুদ্ধে শেরপুর-জামালপুর জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।