বরগুনা সংবাদদাতা;  ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরগুনায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বাড়ি-ঘর। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। এছাড়াও প্রাবিত হয়েছে শতাধিক মাছের ঘের এবং ৩০০ হেক্টর ফসলের ক্ষেত।

বৃহস্পতিবার (২১ মে ২০২০)  দুপুড়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরগুনায় আঘাত হানে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত একটানা ছয় ঘন্টা এর তান্ডব চলে। তাছাড়া প্রায় সারা রাতই এর প্রভাব চলতে থাকে। এ সময়ে বরগুনাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ১৩.৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষাতগ্রস্ত হয়েছে। এতে আয়লা পাতাকাটা, জাঙ্গালিয়া, বুড়িরচর, লবনগোলা, মাইঠা, নলটোনা, পাথরঘাটার জিনতলাসহ অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১০টি চিংড়ির ঘের ছাড়াও ১২১টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। সাতটি আম বাগান ও প্রায় ৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেতসহ ৩০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে বরগুনায় কোন মানুষ মারা যায়নি।

বরগুনা জেলা পানি উন্নয়র বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরগুনায় বুধবার রাতে বরগুনায় ১০ থেকে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৫টি পয়েন্টে ১৩.৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষাতগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমে গেছে। আমরা ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি।

  • বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম বদরুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে প্রায় ৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেতসহ ৩০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, আম, চিনাবাদাম, ভুট্টা, মুগডাল, সূর্যমূখীসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।

এদিকে, বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জেলায় মোট ১৫টি মুরগি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও তালতলী উপজেলার ১৯টি গরুর খামারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

  • বরগুনায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশার সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মোঃ শহীদুল ইসলাম (৬৪) নামের একজন হোটেল ব্যাবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পরীরখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পথে তার মৃত্যু হয়। এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পারষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম শাহনেওয়াজ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরগুনার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়র ও চারটি পৌরসভায় কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম্পান মোকারেলায় এ পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং ২৮ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বরগুনায় পূনঃর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ পরিবারকে দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য,  সারা রাত তাণ্ডব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি স্থল-নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তার আগে সুপার সাইক্লোন আম্পান কিছুটা শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে সন্ধ্যায় আছড়ে পড়ে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলে। আম্পানের তাণ্ডবে দেশের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় ২ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন, পিরোজপুর ৪ জন , বরগুনায় ১ জন এবং সন্দ্বীপে ১ জন, যশোরে ৬ জন , সাতক্ষীরায় ১ জন, ঝিনাইদহে ১ জন ও রাজশাহীতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আমাদের বাণী ডট কম/২১ মে ২০২০/পিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।