জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য দেশের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে বলা হয়েছিল প্রধান শিক্ষকদের। প্রতিটি বিদ্যালয়কে এ জন্য সরকারি খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই হাজার টাকা করে।

৬৫ হাজার ৯০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মোট ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে জাতীয় শোক দিবসের আগে বরাদ্দের টাকা বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছেনি। এমনকি শোক দিবসের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও তা এখনও বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাতে পাননি।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসাইন বলেন, ১৫ আগস্টের আগেই বিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দের এ অর্থ পাওয়ার কথা। যদিও কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে যারা বরাদ্দ পাননি, তারা তা পেয়ে যাবেন। অবশ্য আগে পেলে অবশ্যই ভালো হতো।

টাকা শোক দিবস পালনের আগে না পৌঁছার কারণ সম্পর্কে সচিব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটের প্রতিটি খাতের টাকা খরচের জন্য একটি কোড নম্বর দেওয়া হয়। ঈদের বন্ধের আগে তাড়াতাড়ি করে ৮ আগস্ট এ কোড নম্বর চালু করা হয়। যেসব উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঈদের বন্ধের আগেই কোড নম্বর জানতে পেরেছেন, তারা টাকা তুলে বিতরণ করতে পেরেছেন।

সচিব কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে বললেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এ টাকা পৌঁছেনি। খোদ ঢাকা শহরের অনেক বিদ্যালয়েই এ ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় শোক দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দিবস পালনের বরাদ্দও দেরিতে পৌঁছানো নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।

সরকার এবারই প্রথমবারের মতো ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছিল, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং পুরস্কার প্রদানের। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত বরাদ্দের টাকা পায়নি বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ এ টাকা ৫ আগস্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছার কথা ছিল।

রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকার ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বদরুল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষকরা সরকারের নিম্নবেতনভুক্ত। এর ওপর ঈদের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পরিবার-পরিজনের জন্য তাদের বেতন-বোনাসের অর্থ খরচ করতে হয়েছে।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলায় বরাদ্দের অর্থ ঠিক সময় পৌঁছায়নি- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, জাতীয় শোক দিবস পালন ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর পালন করা হয়। এসব দিবসে নানা আয়োজন করতে পুরস্কার দেওয়া, ব্যানার ও সার্টিফিকেট তৈরি, সমাবেশ করা, আর্ট পেপার, কাগজ, রঙ, আঠা ইত্যাদি বাবদ অর্থের প্রয়োজন হয়। অথচ এগুলোর জন্য কোনো বরাদ্দই নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এসব দিবসের জন্যও আলাদা বরাদ্দ দাবি করেন এই প্রধান শিক্ষক।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের খর্দ সাধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, টাকা পাইনি। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশ্বস্ত করেছেন, অনুষ্ঠানের বিল ভাউচার জমা দিলে টাকা পেয়ে যাব।

একই উপজেলার আল হেলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলয় চন্দ্র মোদক বলেন, মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা দুই হাজার টাকা থেকে আবার খাবারের ভ্যাট বাবদ নাকি ১৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হবে। তার মানে সব মিলিয়ে পাওয়া যাবে ১৭৫০ বা ১৮০০ টাকার মতো। একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, অতীতেও মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নানা বরাদ্দের ক্ষেত্রে পুরো টাকা তারা হাতে পাননি। কেন পুরো টাকা দেওয়া হয়নি- এর ব্যাখ্যাও টিওইও অফিস থেকে সব সময় দেওয়া হয় না।

সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার কাগজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মী রায় এবং গজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন টাকা না পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, তারা নিজেদের খরচে অনুষ্ঠান করেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিপালী রানী রায় বলেন, প্রধান শিক্ষক অনুষ্ঠান করে বিল ভাউচার জমা দেওয়ার পর বরাদ্দের এ টাকা দেওয়া হবে। সরকারি বরাদ্দের টাকা বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আসার কথা। কিন্তু এখনও তা পাওয়া যায়নি।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আইচাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান বলেন, শোক দিবসের দুই হাজার টাকা আগেই পাওয়া প্রয়োজন; পরে নয়। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ‘বিজয় ফুল’ উৎসবের দুই হাজার টাকা সোনাইমুড়ী উপজেলার বিদ্যালয়গুলো আজও পায়নি। তাই তারা আশঙ্কিত।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মনজুর কাদির বলেন, শোক দিবস পালনের আগেই বিদ্যালয়ে টাকা পৌঁছার কথা। এ জন্য অনেক আগেই বরাদ্দের অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় এর ব্যত্যয় কেন ঘটেছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।