‘মহিমা’ মাত্র ৬ পেরিয়ে ৭ বছরে পড়েছে। নামের সাথে রয়েছে অসাধারণ মিল। বাবার প্রতি এইটুকু মেয়ের ভালোবাসা দেখে অনেকে হতবাক। ঘটনাটি সোমবার বিকেলের। মহিমার বাবা মজিবর মাদক মামলার আসামি হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে হাজতবাস করছেন। বাবাকে না পেয়ে বারবার তার মায়ের কাছে বায়না ধরেছে বাবাকে দেখার জন্য। অনেক দিনে বাড়িতে না আসায় বাবার জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করে মহিমা। এ জন্য মায়ের হাতে তাকে মারধরও খেতে হয়েছে কয়েকবার। তবুও নাছোড় বান্দা সে। বাবার সাথে দেখা করবেই। বাবার প্রতি মেয়ের টান তাকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। মায়ের কাছে সে জানতে পারে তার বাবা জেলখানায় আছে। তাই বাবাকে এক নজর দেখার জন্য ফতুল্লার মাহমুদপুর করিম মার্কেট এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার হেঁটে একা একা নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ছুটে আসে ছোট্ট মহিমা।

কারাগারে কিভাবে কয়েদির দেখা করতে হবে তা তো জানে না সে। উপায় না পেয়ে কাঁদতে থাকে। তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে কারাগারের পরিবেশ। একা একা একটা ছোট মেয়ে কারাগারের সামনে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন কারারক্ষীরা।

ছোট্ট মহিমাকে জিজ্ঞাসা করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সে। বলতে থাকে, সে তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছে। মা তার বাড়িতে নির্যাতন করে বলে জেলখানায় বাবার খোঁজে একা একাই চলে এসেছে। কারা কর্তৃপক্ষ মেয়েটির সাথে কথা বলে তার বাবার সাথে দেখা করিয়ে দেয়। পরে কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামান বলেন, শিশু মেয়েটি কারাফটকে এসে কান্না করতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছে। বাবার নাম বলতে পারায় তার বাবাকে খবর দেয়া হয়। বাবা নিজের মেয়ে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাবা ও মেয়ের সাক্ষাতের পর মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।

এ দিকে মহিমার সাথে তার বাবার সাক্ষাতের পর কয়েকটি ছবি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ফেসবুকে আপলোড করা হয়। ছবি দেখে আলমগীর নামে একজন মন্তব্য লিখেছেন,

এ ধরনের ভারেলা কাজগুলো কারা অধিদফতর আশা করি নোট করে রাখবেন এবং কারা সপ্তাহে সম্মাননা প্রদান করবেন যাতে সবাই মানবিকতা ও মহৎ কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে আগামীতে।

শামসুল আলম নজরুল লিখেছেন বাবার প্রতি মেয়ের এক অফুরন্ত ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর কারা কর্তৃপক্ষের মানবিকতা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।

শুভ্র ঘোষ লিখেছেন, সহনশীলতা, মানবিকতা, সর্বোপরি আমাদের প্রত্যেকের একসাথে কাজ করার মানসিকতায়, নারায়ণগঞ্জ কারাগার একের পর এক সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। এই কারাগারের উন্নয়নমূলক ও ভালো কাজ করার পেছনে কারাগারের প্রত্যেক সদস্যদের অবদান অতুলনীয়। ধন্যবাদ এই পরিবারের সব সদস্যকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।