বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে সহপাঠীদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিয়েছে শোকাহত পপি খাতুন নামে এক ক্ষুদে শিক্ষার্থী। সোমবার সকালে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪ নম্বর কক্ষে বসে বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয় পপি।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে মারা যান পপি খাতুনের বাবা শহিদুল ইসলাম (৫০)। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছে পপি খাতুন।

পপি খাতুন উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও ঝলমলি বেগমের মেয়ে। পপির বাবা শহিদুল ইসলাম নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। সোমবার সকালের দিকে নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। স্বজনরা তাকে চিকিৎসা করার সুযোগ পাননি। তাৎক্ষণিক স্বজনদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান পপির বাবা।

শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি পপির। বাবার দোয়ার পরিবর্তে বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই কেন্দ্রে যেতে হয় তাকে। এক হাতে চোখ মুছে আর অন্য হাতে খাতায় উত্তর লিখেছে পপি। পপি খাতুন উপজেলার আটাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

এদিকে শোক সংবাদ পেয়ে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল শোকাহত পপি খাতুনের খোঁজখবর নিতে কেন্দ্রে ছুটে আসেন। পপির পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দেন। সে সময় পপির কান্নায় কক্ষের অনেকের চোখেই পানি চলে আসে। পপি ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়া ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল।

পপির বাবার মৃত্যুতে পরীক্ষা কেন্দ্রে শোকের ছায়া নেমে আসে। পপির সহপাঠী, শিক্ষকসহ অন্যরাও তাকে সান্তনা দিতে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে ছুটে আসেন। পরীক্ষা শেষে বাবার দাফন সম্পন্ন করার জন্য পপি খাতুন চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির পথে রওনা হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।