দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসা ৫৫ শতাংশ শিক্ষকেরই বিষয়ভিত্তিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মাধ্যমিক শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, আয় ও কর্মসন্তুষ্টি, কর্মভার ও শ্রেণী কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষণ-শিখন, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার, প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইয়ের ব্যবহার বিষয়ে জানতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালায় গণসাক্ষরতা অভিযান। এতে ৬০০ প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া গুণগত অনুসন্ধানের জন্য পাঁচটি উপজেলায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি ১০ জন প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও ৩০ জন সহকারী শিক্ষকের বিস্তারিত সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সেকেন্ডারি স্কুল টিচারস ইন বাংলাদেশ: ইন দ্য লাইট অব এসডিজি ফোর’ শীর্ষক এডুকেশন ওয়াচ ২০১৮-১৯ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণিত ও ইংরেজির পাশাপাশি মাধ্যমিকের অন্যান্য বিষয়েও অধিকাংশ শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নেই। বিশেষ করে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষকদের বড় অংশই বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে গেছে। জীববিজ্ঞানের ৭০ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানের ৭৫ দশমিক ৫ ও রসায়নের ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষকই বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পাননি। এছাড়া বাংলার ৬৭ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ৭৮, সাধারণ বিজ্ঞানের ৬৪ ও হিসাববিজ্ঞানের ৬৬ শতাংশ শিক্ষক বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পাননি। মাধ্যমিকের ৩৪ শতাংশ শিক্ষকের বিএড, এমএড ও বিপিএডের মতো পেশাগত প্রশিক্ষণও নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযানের ওই প্রতিবেদনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এসএম হাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের তিনটি ভাগে ভাগ করি। খুব বেশি মনোযোগী, মধ্যম পর্যায়ের মনোযোগী ও খুব কম মনোযোগী। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী শিক্ষার্থীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও আকর্ষণীয় বেতনের চাকরিগুলোয় যাচ্ছে। আর সবচেয়ে কম মনোযোগী শিক্ষার্থীরাই শিক্ষকতায় যাচ্ছে। এজন্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি খুবই জরুরি। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক শিক্ষক ইংরেজি বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে পাঠদান করছেন। বিজ্ঞান কিংবা গণিতের মৌলিক জ্ঞান ছাড়াই শিক্ষক ক্লাসরুমে পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো জিজ্ঞাসা এলে নিজের মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভুল শিখছে। তাই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি আরো গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।