শুক্রবার দেশের বেশিরভাগ স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে। টানা শীতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। বেশি দুরবস্থার মধ্যে আছেন হতদরিদ্ররা। অনেকে নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা বেশি শোচনীয়।

শীতজনিত কারণে সাতক্ষীরা ও নওগাঁয় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে উষ্ণতার জন্য গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে। ভিড় দেখা গেছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। ছুটির দিনে এশিয়ার বৃহত্তম মার্কেট যমুনা ফিউচার পার্কে শীতের কাপড় কেনাকাটার ধুম পড়ে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা হ্রাসের কারণে শীত লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শীতের অনুভূতির সঙ্গে আরও কিছু বিষয় জড়িত। রংপুর বাদে আর সব বিভাগেই শুক্রবার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ছিল শীতল বায়ুর প্রবাহ।

এছাড়া উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব এবং মৌসুমি লঘুচাপ শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ১৭ ডিসেম্বর থেকে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

শুক্রবার সকালে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে বৃষ্টি হলেও সূর্যের মুখ দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে উষ্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ধরণী। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ১০ মিলিমিটার।

আবার এ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে সূর্য ডোবার পরে সারা দেশেই রাতে শীতের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) একজন ডিউটি কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টি হলে আকাশ থাকে মেঘমুক্ত। এতে ঊর্ধ্বাকাশের শীতল বায়ু নিম্নাকাশে বা পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে অনায়াসে। এছাড়া রাতের ব্যপ্তিকাল বেশি। সূর্য ঠিকমতো ধরণী উষ্ণ করতে না পারায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। সাধারণত, এ দুয়ের ব্যবধান ১০ ডিগ্রির কম হয়ে গেলে হাড় কাঁপানো শীতের অনুভূতি হয়ে থাকে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা যদি ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু শৈত?্যপ্রবাহ। এ হিসাবে শুধু রংপুর বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অবশ্য অন্য বিভাগগুলোতে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে আছে তাপমাত্রা। বেশির ভাগ স্থানেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির মধ্যে আছে।

এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুয়াশার প্রকোপ। পরিস্থিতি এমন যে, ভোরে ও সন্ধ্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দিনে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়েও বেশি দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। দৃষ্টি সীমা কমে যাওয়ায় রেল চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। আজকে কুয়াশার প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদর থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বিএমডি।

শুক্রবার সরেজমিনে যমুনা ফিউচার পার্কে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকানে শীতের কাপড় কেনাকাটার ধুম পড়েছে। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ব্র্যান্ড-কিউর সামনে কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা কলেজশিক্ষক আকলিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, যৌক্তিক দামে দেশি-বিদেশি রুচিশীল পোশাক পাওয়া যায় এ মার্কেটে। এ কারণে অনেক দূর থেকে কেনাকাটা করতে এসেছি।

 সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, শীতে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় একদিন ধরে ঠিকমতো সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ চলছে।

বগুড়া  সংবাদদাতা জানান, সরকারিভাবে একদফা ৬৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। আরও ৩৬ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

শীতে বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতজনিত নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ রোগীর ভিড় বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, শুক্রবার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৩০ জন শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এ নিয়ে ১ নভেম্বর থেকে ৪৪ হাজার ২৫০ জন আক্রান্ত হলেন শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বরসহ অন্য রোগে।

 সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, শীতে শুক্রবার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরধ্যে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গোবিন্দ মণ্ডল (৭৫)। নওগাঁর নিয়ামতপুরে ৫ জন- সাইফুদ্দীন (৬০), জোহরা বেগম (২০), নজরুল ইসলাম (৭০), আনোয়ারা বেগম (৮০) এবং আনোয়ার হোসেন (৪০)। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে এ সময়ে কেউ মারা যাননি। অবশ্য ১ নভেম্বর থেকে সংস্থাটি  শীতসহ অন্যান্য রোগে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।