অবশেষে দেশে আনা হয়েছে সৌদি আরবে নিহত মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের গৃহকর্মী নাজমা বেগমের (৪০) মরদেহ। গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাজমার মরদেহ পৌঁছে। সেখান থেকে মরদেহ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়ি উপজেলার ইসলামনগরে নিয়ে আসেন স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে নাজমার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বামী দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ১১ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন নাজমা বেগম। গত ২ সেপ্টেম্বর তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ক্লিনারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে পাঠানো হলেও কাজ দেওয়া হয় বাসাবাড়িতে। সেখানে তাকে যৌন নির্যাতনসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হতো।

মৃত্যুর আগে তিনি টেলিফোনে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদম দালাল সিদ্দিকুর রহমানের হাত-পায়ে ধরেও হতভাগ্য নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। মারা যাওয়ার পর তাঁর মরদেহ দেশটির আবাহা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের হিম ঘরে পরে থাকলেও দেশে আনতে পারছিলেন না স্বজনরা। এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর কালের কণ্ঠ অননলাইন সংস্করণে ‘সৌদিতে নির্যাতনে নিহত নাজমার লাশের অপেক্ষায় স্বজনদের কান্না’ ও ৪ অক্টোবর দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রিন্ট সংস্করণে ‘গৃহকর্মীর লাশ এক মাসেও দেশে আসেনি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হলে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ নাজমার মরদেহ আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। সরকারি নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এক মাস ২৪ দিন পর নাজমার মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাজমার মরদেহ আনা হয়। সেখান থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়ি উপজেলার ইসলামনগরে পৌঁছলে শুরু হয় শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে আকাশ বাতাস। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

নিহতের ছেলে রাজিব মিয়া তার মায়ের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন ও গৃহকর্তার উপযুক্ত বিচার ও মৃত্যুজনিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদটি দেখার পর জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসারকে নিহত নাজমার লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে নাজমার লাশ দেশে এসেছে। স্বজনরা যেন মৃত্যুজনিত আর্থিক অনুদান ও ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।