ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটাই বেড়েছে যে, পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলা চলে। রাজধানীসহ সারা দেশেই প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। নতুন নতুন রোগী প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন। বেডে জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে শুয়েও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই এখন উপচে পড়া ভিড়।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১০ হাজার ৫২৮ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৮৩ জন। এটিও একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যা বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল ৮ থেকে শনিবার সকাল ৮ পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টার হিসাবও তুলে ধরা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৮ সালে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০ হাজার ১৩৮ জন রোগী। সেটি ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা শহর এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় ৬৫১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৬৪৩ জন। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ২৩৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ৯ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২ জন, বারডেম হাসপাতালে ১২ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২৪ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন রোগী। আর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২০৬ জন রোগী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন, ধানমন্ডি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ১২ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩২ জন, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ইউনাইটেড হাসপাতালে ৬ জন, খিদমা হাসপাতালে ১৫ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ১১ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৯ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।

ঢাকার বাইরে গাজীপুরে ১৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ২ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানানো হয় সরকারি প্রতিবেদনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া সরকারি প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১ জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৪৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৬৭১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। রিপোর্টটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি নেই। এছাড়াও ২২টি বেসরকারি হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।