ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অটো ব্রিকস ও ইটভাটার মাটির চাহিদা পূরণ করতে মাটি ব্যবসায়িদের থাবায় কৃষি জমি বড় বড় খাদে বা গর্তে পরিণত হচ্ছে। এতে দিনদিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি ও চাষাবাদ।

কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া মানেই আমাদের হুমকির সমূক্ষীণ হতে হবে। এসব অটো ব্রিকস ও ইটভাটার মাটি ব্যবসায়িদের থাবা থেকে কৃষি জমি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সকল মহলের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লাঠিভাঙ্গা ও ইটাহাটা এলাকায় চক জুরে রয়েছে কৃষি জমি। অনেকেই জমি চাষাবাদ করছেন। আবার অনেকের জমি পতিত পড়ে আছে। পতিত পড়ে থাকা জমিগুলো নিচু ও গভীর গর্ত। যার ফলে ওই জমিতে কোন ধরণের ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই তাদের জমিতে পালন শাক, সরিষা, লাল শাক, বাধাকপি, ফুলকপি, টমেটো ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছে। কেউ কেউ ধান চাষাবাদ করেছে। এসব সবজি ক্ষেতের মাঝে মাঝে রয়েছে বিশাল গর্ত। এসব গর্ত কোন কাজে লাগছে না বরং নষ্ট হয়ে গেছে কৃষি জমি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,মহানগরের লাঠিভাঙ্গা ও ইটাহাটা এলাকার চকটির সকল জমিতে এক সময় বিপুল পরিমাণে চাষাবাদ হতো। দিন দিন স্থানীয় অটো ব্রিকস ও ইটভাটায় এসব জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয়ার ফলে এখন আর আগের মতো কৃষি আবাদ হচ্ছে না। তবে অনেক কৃষি জমি কমে গেছে। বেশী টাকার লোভে অনেকেই কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে অটো ব্রিকস ও ইটভাটায়। আবার অনেকেই বাধ্য হয়েই পাশের জমির মাটি বিক্রি করছে। এ এলাকার ফসল ও সবজি এক সময় নিজেদেও চাহিদা মিটিয়ে আশপাশ এলাকার মানুষের চাহিদাও মেটাতো। বর্তমানে অটো ব্রিকস ও ইটভাটার থাবায় এসব কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। কোন ধরণের নিয়মনীতি না মেনে গত কয়েক বছর ধরেই এসব কৃষি জমি থেকে অটো ব্রিকস ও ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

চলতি বছরও এসব কৃষি জমি থেকে অটো ব্রিকস ও ইটভাটায় মাটির জোগান গিতে ওইসব এলাকার কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করার প্রস্তুতি চলছে। মাটি কেটে নেয়ার কারণে এসব এলাকায় এখন বড় বড় খাদে বা গর্তে পরিনণত হয়ে ব্যহত হয়েছে কৃষি আবাদ। এভাবে চলতে থাকলে ওইসব এলাকাগুলো থেকে এক সময় বিলিন হয়ে যাবে কৃষি কাজ ও চাষাবাদ। ঘাটতি পড়বে ধানসহ শাক সবজি ও অন্যান্য ফসলাদির। এসব কৃষি জমি রক্ষায় এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনসহ সকল মহলের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন যাতে নতুন করে আর কোন কৃষি জমি নষ্ট না হয়।

নাম না বলার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই কোনাবাড়ী এলাকায় ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি অটো ব্রিকসসহ বিভিন্ন ইটভাটায় এ এলাকার কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়। যার ফলে এসব কৃষি জমি এখন বড় বড় খাদে পরিণত হয়েছে। যার ফলে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি ও নানা ধরণের ফসল ও সবজি আবাদ। কৃষি জমি রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসন কোন হস্তক্ষেপ করছেন না। এবছরও এসব কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার হিড়িক চলছে। প্রশাসনের নজর থাকলে রক্ষা পাবে কৃষি জমি।

ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার শফিক আহম্মেদ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরাসরি কোন কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেই না। মাটি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে মাটি কিনে আনি। তবে মাটি ব্যবসায়িরা কোথায় থেকে মাটি আনে তা আমরা জানি না।

গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা বলেন, বর্তমানে দেশে ৫০ ভাগের বেশী মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমাদের উচিত কৃষি জমি টিকিয়ে রেখে কিভাবে আমাদের অন্য দিকে উন্নতি করা যায় সেগুলো খুজতে হবে। কৃষি জমি নষ্ট করা যাবে না, তা রক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় কৃষির উপর প্রভাব পড়ছে। কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া মানেই আমাদের হুমকির সমূক্ষীণ হতে হবে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মশিউর রহমান বলেন, কৃষি জমি থেকে অনুমোদন ছাড়া গভীর করে মাটি কাটার কোন নিয়ম নেই। তবে যারা এর সাথে জড়িত আমারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।