সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শেখ নূরুল ইসলামকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে অপমান করার অপরাধে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মুক্তিযু্দ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, সিনেট সদস্য ড.আকম জামাল উদ্দিন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সহ সংগঠনটির কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে ড.জামাল উদ্দিন বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, যাঁদের বীরত্ব ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছি, পেয়েছি লাল সবুজের পতাকায় শোভিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু আজ তাঁরা রক্তাক্ত এবং অপমানিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গভীর দুঃখ ও হতাশার সাথে লক্ষ্য করছে যে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি একের পর এক হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলো সেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি আবার চক্রান্ত করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যা, হামলা, অপমান, নির্যাতন করে যাচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন গুলোতে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে একাত্তরে পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও দোসররা অত্যন্ত সুকৌশলে জায়গা করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহকদের টার্গেট করে একের পর এক হত্যা, হামলা, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শেখ নুরুল ইসলামকে কালীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মোস্তফা শাহীন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা- বিরোধীদের মদদে জনসম্মুখে পুলিশকে দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিকভাবে জনগণের বিক্ষোভের কারণে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ইউএনও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে স্থানীয় উপজেলা-জেলার মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ জানানোর পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং ইউএনও প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকিপ্রদান এবং হেনস্তা করে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কালীগঞ্জ থানার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জনসম্মুখে এভাবে প্রশাসনের হাতে অপমানিত-লাঞ্চিত হতে হবে এটা অবিশ্বাস্য। যাঁদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা লাল-সবুজের পতাকা তাঁদেরকে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবিরের দোসররা অপমান করবে- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কখনোই এটা মেনে নিবে না। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরেও এর কোন বিচার না হওয়ায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার এই ঘটনার দায়ভার এড়াতে পারেন না। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছে।

এছাড়াও কিছুদিন আগে বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার আজিজ নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারকে হামলা করে রক্তাক্ত করা হয়েছে, গত ১৫ ই আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীরমুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমানের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস আহমেদ কে চকরিয়া থানার ভিতরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনে চড় মেরেছে সাহারবিল ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল। পরে স্থানীয় পৌরসভার মেয়র আলমগীর এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সেই কুলাঙ্গার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রেয়াজনগর মহল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মণ্ডলকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুককে হত্যা করা হয়, হত্যাকারীর বিচার আজও হয়নি । উপরন্তু, হত্যাকারীরা জামিনে বের হয়ে এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক সাহেবের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। সিলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গত ১৮ আগস্ট শহীদ মকবুল হোসেনের পরিবারের উপর হামলা করে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পুত্রকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বঙ্গবন্ধু নিয়ে গল্প বলার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা নূরন্নবী সরদারের উপর নগ্নভাবে হামলা করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যা, হামলা, নির্যাতন করা হচ্ছে যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অত্যন্ত লজ্জাজনক। রাষ্ট্র কখনোই এসব হত্যা, হামলার দায়ভার এড়াতে পারে না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন যদি প্রণয়ন করা হতো তাহলে এসব নিষ্ঠুর অপরাধ কখনোই ঘটতো না। চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধার শরীর রক্তাক্ত দেখতে হতো না। একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এখনো দেখতে পাইনি। কিছুদিন পূর্বে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলার ইউএনও এবং ওসি কখনোই এর দায়ভার এড়াতে পারে না। আজও পর্যন্ত সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এসব ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছে।

আমাদের বাণী /আ-আ-মা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।