নিজস্ব সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ; জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের কিশোরী তাকমীন হত্যার তিন দিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে এ জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।

মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও  উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র এবং আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ত্র আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের কিশোরী কন্যা তাকমীনের (১৬) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। তাকমীন বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার (২৩ মার্চ ২০২০) দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশিকুল মোবাইল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আঠারদানা জামে মসজিদের কাছে তাকমীনকে ডেকে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ছিল আশিকুলের বন্ধু পুলিশের হাতে আটককৃত মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। সেখানে যাওয়ার পর আশিকুল তাকমীনকে ধর্ষণ করে। পরে মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও আশিকুল তার মাথার পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।

এরপর আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ টেনে-হিঁচড়ে মসজিদের একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ফজরের জামাতে আশিকুল ইমামতি করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকমীনের লাশ জাম গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল পড়ে ছিল।

লাশটি দেখতে পেয়ে মুসল্লিরা  স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। বিকালে তাকমীনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ ২০২০) সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনুকুল সরকারসহ গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।

ঐ মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল (৬৪) জানায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার  ফজরের নামাজের আজান দেয় ও ইমামতি করে মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। গত বুধবার দুপুর থেকে সে পলাতক রয়েছে।

আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হক (৪৭) জানায়, ওইদিন মসজিদে যেতে দেরি হওয়ায় আশিকুল ইমামতি করে। নামাজ শেষে একটু আঁধার কাটলে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের কাছে জাম গাছের ডালে বাধা একটি মেয়ের লাশ দেখতে পায় এবং লাশটি শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়।

এ ব্যাপারে তাকমীনের ছোট বোন সুমাইয়া (১৩) জানায়, তার বোন রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া।

জানতে চাইলে গফরগাঁও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এখন বাড়তি কিছু বলা যাবে না।

আমাদের বাণী ডট কম/২৭ মার্চ ২০২০/ডিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।