চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রুবেল হোসেন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর দুই হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার ঘটনায় উজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপরেই একের পর এক তার অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসে গণমাধ্যমে।

তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত পদ্মা নদীর তীর লাগোয়া বিশাল এলাকায় যেন নিজস্ব এক রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন ফয়েজ। ধু-ধু মাঠের এক প্রান্তের বিশাল বাঁশঝাড়ের পাশে গড়ে তোলা একটি ভবনে ‘উজিরপুর যুব ফাউন্ডেশন’-এর আড়ালে নানা অপকর্ম চলান এই নেতা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেখানে গড়ে তোলা ‘টর্চার সেলে’ মাদক কারবারি ও গরু পাচারকারীদের আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা।

এছাড়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ফয়েজ উদ্দীন সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়কে বাদ দিয়ে নিজস্ব জমিতে নতুন করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় করেন।

উজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুরুল হুদা গণমাধ্যমকে জানান, উজিরপুরের জলমোড়ে সরকারিভাবে ইউনিয়ন কার্যালয় আছে। কিন্তু ফয়েজ তার অপকর্ম চালাতেই ওই কার্যালয় না ব্যবহার করে আলাদা আস্তানা করেছে। সরকারি জায়গা নয়, সরকারি ভবন নয়। এটা কী করে ইউনিয়ন কার্যালয় হয়?

এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, বিচার-সালিশে মানুষের সমস্যার সমাধান না করে পক্ষ নিয়ে অবৈধভাবে টাকা আয় করাই হচ্ছে তার কাজ। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের টাকা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ব্যবসায়ীকে জোর করে ধরে নির্যাতন চালানোর পর টাকা আদায় করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উজিরপুরের কয়েকজন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ, ছিনতাই ও জিম্মি করে অর্থ আদায়সহ নানা অপকর্ম করার জন্য নিজ নামে গড়ে তোলা ‘ফয়েজ বাহিনী’র সদস্যদের নিয়ে ওই আস্তানায় থাকত চেয়ারম্যান ফয়েজ। লোকালয় থেকে দূরের ওই আস্তানার একটি ঘরের মধ্যে তৈরি করা ‘টর্চার সেলে’ মাদক কারবারি ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। ওই ঘরে বেঁধে মারধরের পর টাকা কেড়ে নেওয়া হতো।

খুব অল্প সময়ে শিবগঞ্জের মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা বনে যাওয়া ফয়েজ উদ্দীনের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক চালানের এই হোতা জালিয়াতিতেও বেশ পটু। অবৈধ ব্যবসা নিশ্চিন্তে চালাতে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে ফেলে সে, যা পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম ফয়েজ চেয়ারম্যানের ন্যাশনাল আইডি পরিবর্তনের এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।