রাষ্ট্রকে হুমকী প্রদান করার অপরাধে এবং সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এ সংবাদিক সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.আ.ক.ম জামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল,সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান মুক্তিযু্দ্ধ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক ড.আ.ক.ম জামাল উদ্দিন।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে মুজিবীয় শুভেচ্ছা এবং সংগ্রামী সালাম রইলো। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদের নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দেশের সকল অন্যায়-অবিচার-শোষণ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শ ছিলো শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন করা। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সফল রাষ্ট্র নায়কোচিত ভূমিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে অনেক উজ্জ্বল করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বঙ্গবন্ধু কন্যার পাশে থেকে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে বদ্ধ পরিকর। কারো ব্যক্তিগত অপকর্ম-অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ভার দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিবেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি। সেই সংগঠনের ভাবমূর্তি ধ্বংস করা হয়েছে। যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খোলস পাল্টিয়ে বিএনপি নেতা থেকে যুবলীগ নেতা বনে যাওয়া জিকে শামীমরা একের পর এক টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি, হত্যা ইত্যাদি করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সকল উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এদের আশ্রয়দাতা কারা? এদেরকে দলে কে জায়গা দিয়েছে? পুরো ঢাকা শহরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য করে যুবসমাজকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এরা কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা করে না। এরা টাকা দিয়ে পদ নিয়ে নানান অপকর্ম করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতিবাজদের জায়গা বাংলাদেশে হবে না। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের বিভিন্ন অপকর্মের নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অঙ্গ সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অফিসকে অবৈধভাবে দখল করে জুয়ার আসর বসিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে দলীয় আদর্শ এব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেঈমানী করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, এরকম অভিযান যেনো নিয়মিত অব্যাহত থাকে। দুর্নীতি-অনিয়ম সমাজ থেকে নির্মূল করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতারা যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। কিন্তু যুবলীগ চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধ কোন ব্যবস্থা নেননি। বিএনপি থেকে আসা নেতা জিকে শামীম, খালেদ ভূইয়াকে যুবলীগে জায়গা দিয়েছেন, বড় পদে বসিয়েছেন। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি একসাথে পালন করেছেন। কিন্তু জিকে শামীমদের মতো অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। সুসময়ে জিকে শামীম-খালেদ ভূইয়াদের সাথে নিয়ে চললেন কিন্তু গ্রেফতারের পর আর তাদের চিনতে পারেন না। আমরা লক্ষ্য করলাম জিকে শামীম-খালেদ ভূইয়াকে গ্রেফতারের পর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,” যুবলীগের কেউ গ্রেফতার হলে আমরা বসে থাকবো না।” তিনি এধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে হুমকী দিয়েছেন। যা দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য হুমকি স্বরুপ। দেশরত্ন শেখ হাসিনার চোখে আর ফাঁকি দিতে পারবেন না। যথেষ্ট হয়েছে। এবার পদত্যাগ করুন। ২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি হয়েছে। কমিটি অনেক বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন না করার কারণ কি? নিয়মিত নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ার কারণে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। কেন্দ্র থেকে কেনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ বিতর্কিত নেতাদের এসব অপকর্মের দায়ভার কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অবিলম্বে যুবলীগের দায়িত্ব থেকে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদকের সকল স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মনে করে, যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী এবং হারুনর রশীদ। আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করে যুবলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা করুন। বঙ্গবন্ধু আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা নিরলস পরিশ্রমকে সফল করার আপনাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দেশ ও জনগণের স্বার্থে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট যুবলীগের চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদকের অপসারণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করবে।

আমাদের বাণী/আ-আ-মা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।