বেতন বৈষম্য নিরসন তথা প্রধান শিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত মোর্চা বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ভেঙে যাচ্ছে। নীতিগত কারণে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা ঐক্যপরিষদের পদ-পদবি প্রত্যাখ্যান করে কোনো প্রকার কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের পর আরো চার-পাঁচটি সংগঠন ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছেন। নেতাদের অভিযোগ, ঐক্যপরিষদের কয়েকজন নেতা ১৩তম গ্রেডের বেতন কম-বেশি হওয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করবেন না। ২-৩ জন নেতার কৌশলগত অপরিপক্কতার কারণেই ১০ম ও ১১তম গ্রেডের দাবি আদায় হয়নি। যদিও মোর্চা ভেঙে যাওয়া মেনে নিতে নারাজ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আনিস। এদিকে যে ব্যানারেই হোক দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঠে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বর্ষিয়ান শিক্ষক নেতারা।

শনিবার সংগঠনগুলোর নেতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঐক্য পরিষদ ভেঙে দিয়ে পরিষদের নামে পদ পদবি ব্যবহারসহ কোনো প্রকার কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করছি। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি আদায়ে আমরা স্বতন্ত্রভাবে মাঠে থাকবো। জেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করেছি। তারা সবাই এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।’

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঐক্য পরিষদের নেতারা ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়বে কি কমবে সে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন যা দেখে বোঝা যায় তারা ১৩তম গ্রেড একপ্রকার মেনে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি আদায়ে অনড়। তাই আমরাও করি সব থেকে বেরিয়ে এসে স্বতন্ত্র আন্দোলন করার বিষয়টি চিন্তা ভাবনা করছি। যদি অন্য কোনো সংগঠন চায় তাদের সাথে নিয়েই মাঠে থাকবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনোয়ারুল হক তোতা, আনিসুর রহমান আনিস ও শামসুদ্দিন মাসুদ দাবি আদায়ের কৌশলগুলো গণশিক্ষা সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সামনে ফাঁস করে দিয়েছেন। পরিষদের মূল নেতারা ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশসহ দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন ১৩তম গ্রেডের বেতন বাড়বে কি কমবে তা নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। তাই সাত-আটটি সংগঠন ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।’

সহকারী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আব্দুল হক ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঐক্য পরিষদের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ম ও ১৩তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করতে চায় না। ২-৩ জন নেতার কৌশলগত অপরিপক্কতার কারণেই ৪ লাখ শিক্ষক ১০ম ও ১১তম গ্রেড থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও ৭-৮ সংগঠন একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

যদিও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আনিস পরিষদ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘নেতারা ঐক্য পরিষদকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু এখনো জানায়নি। শুধু আতিকুর রহমান আতিক প্রধান সমন্বয়কের পথ ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়েছেন। কোন সংগঠন ঐক্য পরিষদের সাথে থাকবে কি থাকবে না তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

এদিকে যে কোনো ব্যানারেই হোক দাবি আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বর্ষিয়ান শিক্ষক নেতা ও বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঐক্য পরিষদ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। নেতারা মাঠ পর্যায় থেকে আন্দোলন করে পদ-পদবি না পাওয়ায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো ব্যানারেই হোক দাবি আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে। ‘

গত নভেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের থেকে একধাপ উপরের গ্রেডে বেতন পেলেও নতুন গ্রেডে সে ভেদাভেদ থাকছে না। নতুন গ্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা উভয়ই ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা উভয়ই ১৩তম গ্রেডে বেতন পাবেন। যদিও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১ তম গ্রেডে বেতন আদায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিল প্রাথমিকের শিক্ষকরা। সৌজন্যে দৈনিক শিক্ষা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।