ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  আগামীকাল পহেলা মে। বিশ্ব শ্রমিক দিবস।  কভিড ১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতিতে যার যার অবস্থানে থেকে মে দিবস পালনের আহবান জানিয়েছে- শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ‘স্কপ’।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল ২০২০) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ নেতৃবৃন্দ  করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই মহান মে দিবস পালন করার আহবান জানিয়েছেন।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ
পহেলা মে মহা শ্রমিক দিবস। ফাইল ছবি

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর যুগ্ম সমন্বয়কারী শ্রমিক নেতা ফজলুল হক মনটু এবং নইমুল আহসান জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে শাহ মোহাম্মদ জাফর, আনোয়ার হোসেন, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সাইফুজ্জামান বাদশা, চৌধুরী আশিকুল আলম, রাজেকুজ্জামান রতন, কামরুল আহসান, শামিম আরা, পুলক রঞ্জন ধর এক বিবৃতিতে ১ মে সকাল ১০টায় মে দিবস উপলক্ষে প্রতিটি সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই মে দিবস পালনের আহবান জানান।

মহান মে দিবস উপলক্ষে মে দিবসের ঘোষণা ও দাবিনামা সংযুক্ত করা হল।

মহান মে দিবসে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর ঘোষণা;

শ্রমিকের রক্তঝরা সংগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মহিমায় মহিমান্বিত সংগ্রামের প্রতীক হচ্ছে ১ মে মহান মে দিবস। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্যদিয়েই শ্রমিককে অধিকার আদায় করে নিতে হয়। শ্রমিক শ্রেণির ছোট বড় বিচ্ছিন্ন স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন যূথবদ্ধ ও সংগঠিত রূপের আন্দোলনের সূচনা ঘটায় ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সমাবেশের মাধ্যমে। শ্রমিকের এই আন্দোলন সাফল্যও ছিনিয়ে আনে প্রতিষ্ঠিত হয় ৮ ঘণ্ট শ্রম, ৮ ঘণ্ট বিনোদন ও ৮ ঘন্টা বিশ্রামের সময় সীমা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে মহান মে দিবস। পুঁজিবাদী অর্থনীতি যে কত ভঙ্গুর এবং ধ্বংস উন্মুখ তা প্রমাণিত হয়েছে ২টি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যদিয়ে। আজ বিশ্বায়ন, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, শোভন কাজ, শোভন কর্মপরিবেশ সবই প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাস্থ্যখাতকে মুনাফার ক্ষেত্র বানানোর কারনে তা বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে। এর ফলে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এক বিপন্নদশায় পরিণত হয়েছে।শতাব্দীর উন্নয়ন কৌশল এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এসব কোন ব্যবস্থায় আজ রক্ষা করতে পারছেনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা ভাইরাস তথা কভিড ১৯ এর সংক্রমণ একদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভিতকে যেমন কাপিয়ে দিয়েছে তেমনি শক্তিধর দেশগুলোর ভিতরে বিরোধকেও ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলছে। কারখানা বন্ধ, ছাঁটাই, লে অফ, চাকরিচ্যুতির মহামড়কে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ এক দুর্বিষহ অনাগত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় আশঙ্কিত। প্রণোদনা প্রণোদনা প্রণোদনা কতখানি রক্ষা করতে পারবে আমাদের এই প্রশ্নই জাগছে সবার মনে ।বিশ্বব্যাপী এই মহাদুর্যোগ মহাদুর্ভিক্ষের ঘন্টা ধ্বনি বাজাচ্ছে ।

সমগ্র বিশ্ব তথা বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণির সামনে আজ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার জন্য শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষকে এককাতারে এসে দাঁড়ানোর,নিজের অধিকার সংরক্ষণ ও নতুন ভবিষ্যতের শপথ নেওয়ার প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। দান দয়াদাক্ষিন্যে চলবে কতক্ষণ? না পাওয়ার বেদনায় মানুষের হাহাকার থেকে সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচানোর লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে শ্রমিক শ্রেণিকে । তাই আসুন ! এই পরিবর্তিত পরিবেশে এবারের মহান মে দিবসে আমরা শপথ গ্রহণ করি শ্রমিক কর্মচারীদের সকল দুর্যাগ ও দুর্ভোগ লাঘবে আমরা সমস্ত শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দৃঢ় পদক্ষেপে অর্জিত অধিকার রক্ষা ও নতুন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে যাবো দৃঢ় পদক্ষেপে ।

মে দিবস ২০২০ এর দাবি
প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল খাতের শ্রমিকের কাজ, ন্যায্য মজুরী, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত কর।
সাধারণ ছুটির সময় শ্রমিক ছাঁটাই, লে অফ চলবে না।
করোনা দুর্যোগে শ্রম আইনের ১২ ও ১৬ ধারার প্রয়োগ বন্ধ কর।
শ্রমিকদের করোনা সুরক্ষা, পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত কর।
করোনার কারনে সাধারণ ছুটিতে শ্রমিকদের বেতন কাটা চলবে না।
করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার দায়িত্ব মালিক এবং সরকারকে নিতে হবে।
করোনার সুযোগে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার হরন করা চলবে না।
সড়ক ও নৌ পরিবহণ, নির্মাণ, রিক্সা, ইজিবাইক, হকার, ছোট দোকানদার, পাদুকা শ্রমিক, দিন মজুরসহ কর্মহীন শ্রমিকদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান কর।
পাটকল, চিনিকলসহ রাষ্ট্রীয় কলকারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী চাই।
ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিক এবং বিদেশ গমন প্রত্যাশীদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।
সাময়িক ত্রাণ নয় নিয়মিত রেশন চাই।
সংগঠন করার স্বাধীনতা ও দর কষাকষির অধিকার চাই।
শ্রমিক শ্রেণী এক হও! শোষণ নির্যাতন রুখে দাড়াও !
শোষণ বৈষম্য দূর করে শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে মে দিবসের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হও !

আমাদের বাণী ডট কম/৩০ এপ্রিল ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।