ক্ষমতার রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ছিলেন তুরুপের তাস। এ তুরুপের তাসকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই বেশি ব্যবহার করেছে। বিএনপিও চেষ্টা করেছে কিন্তু সে তাস হিসেবে তাকে ব্যবহার করা যায়নি।

২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকারপ্রধান হিসেবে আসার পর ভয়ভীতি দেখানো হয় এরশাদকে। পুরনো মামলায় তাকে জেলে দেয়া হবে, নতুন করে আরও মামলা দেয়া হবে- এমন ভীতি প্রদর্শনের ফলে এরশাদ ২০০৫ সালে জাতীয় পার্টি নিয়ে মহাসমারোহে খালেদা জিয়ার জোটে যোগ দেন। খালেদা জিয়াও তাকে কাছে টেনে নেন পরম মমতায়।

২০০৭ সালের এক-এগারোর কিছু আগে সমীকরণ আবার পাল্টে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এরশাদ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন। ২০০৯ সাল তিনি এবং তার দল ক্ষমতার ভাগীদার হন।

ভোটের রাজনীতিতে ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুতির পর নানা মামলায় হাত-পা বাঁধা ছিল এরশাদের। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে জাতীয় পার্টি রাজপথে যখন ছিল তখন এরশাদ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জেলে বসে তিনি পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তার ও জাতীয় পার্টির জন্য ছিল না। নেতাকর্মীরা ছিলেন জেলে, নয়তো পলাতক। গণরোষে পতিত জাতীয় পার্টি সেই ভোটযুদ্ধে ৩৫টি আসনে বিজয়ী হয়।

১৯৯৬ সালে দায়ের করা মঞ্জুর হত্যা মামলাটি তখনও বিচারাধীন।রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে মামলাটির মীমাংসা হতো। কিন্তু মীমাংসা হয়নি। কারণ, এরশাদ হলেন মহাজোটের তুরুপের তাস, যেমনটি বিএনপির জন্য জামায়াত। বিএনপি ভালো করেই জানে, জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচনের পুলসিরাত পার হওয়া অসম্ভব। আওয়ামী লীগও বুঝে যায়, মুশকিল আসান করে দেবেন এরশাদ তথা তার জাতীয় পার্টি।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনেও এরশাদ কারাগারে বসে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। তবে কারামুক্ত হয়ে এরশাদ জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে কার্যকর, দূরদর্শী ভূমিকা রাখতে পারেননি। এতে দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে। দলের অনেক নেতা তাকে ছেড়ে চলে যান। তিনি জেল খেটে অর্থদণ্ড দিয়ে বের হন এবং ওই সময় তিনি চারদলীয় জোটও ছাড়েন।

কঠিন বিপর্যয়ের মুখেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৪টি আসন লাভ করে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিজয়ী হওয়ায় ভোটের পরদিনই এরশাদ দেশের বাইরে চলে যান। পরিবেশ অনুকূলে এলে দেশে ফিরে দল গোছানোর কাজে হাত দেন। সেই নির্বাচনের আগেও জাতীয় পার্টি আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে।

২০০৬ সালে বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে নানা নাটকীয়তা ও শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার মধ্যে প্রধান দুই দল তাকে কাছে টেনেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে তিনি যখন পল্টনের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের মঞ্চে উঠলেন, তখন ১৪ দল মহাজোটে পরিণত হয়। সেবার আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি ও ক্ষমতায় এলে আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব দানের চুক্তি করেছিল। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন এলে সেই চুক্তি তামাদি হয়ে যায়।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটে প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি আবারও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। মহাজোট সরকারের অংশীদারও হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, নানামুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় পার্টিকে আরেক দফা বিপর্যয়ে ফেলে। মৃদু ভাঙনও দেখা দেয় দলে। তবুও সংসদে বিরোধী দল ও সরকারের অংশীদারত্ব পায় জাতীয় পার্টি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আবারও আসন নিয়ে দেন-দরবার শুরু করেন এরশাদ। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। এবার সরকারের খুঁটি বেশ শক্তিশালী হওয়ায় এবং ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আবারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকায় এরশাদ তেমন জেদ ধরতে পারেননি। ফলে আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসন জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয় তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

একাদশ সংসদে সরকারে মন্ত্রিত্বের ভাগ না পেয়ে বিরোধী দলে অবস্থান নেয় জাতীয় পার্টি। সৌজন্যে জাগো নিউজ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।