রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জাতিকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে উল্লেখ করে অবিলম্বে তালিকা সংশোধন ও তালিকা প্রণয়নে জড়িতদের শাস্তি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান সেই সাথে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।

বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান মঙ্গলবার সংবাপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ৪৮ বছর পর ৪৯তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে খালেকুজ্জামান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় একজন যোদ্ধার কাছে সবচেয়ে গৌরব এবং সম্মানের, অন্যদিকে রাজাকার শব্দটি বাংলাদেশে সবচেয়ে ঘৃণিত। কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম যদি রাজাকারের তালিকায় থাকে তাহলে এর চেয়ে অপমানের আর কিছু হতে পারে না। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেখে গোটা জাতি স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। এটা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমগ্র দেশবাসীকে অপমাণিত করেছে।

কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বরিশালের বাসদ এর সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর বাবা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্ত্তী ও তার দিদিমা ঊষা রাণী চক্রবর্ত্তীর নাম প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অথচ তপন কুমার চক্রবর্ত্তী সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের গেজেটেও তিনি একজন তালিকাভুক্ত ও সম্মানী ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। অথচ একই মন্ত্রণালয়ে তাঁকে কিভাবে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হলো? এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিনা তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, শুধু তপন কুমার চক্রবর্ত্তী নয়, বরিশালের বিশিষ্ট সাংবাদিক মিহির লাল দত্ত, রাজশাহীর বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক, একুশে পদক প্রাপ্ত, মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর জনাব এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, সিরাজগঞ্জের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এক সময়ের জাসদ নেতা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক এমপি জনাব লতিফ মির্জা ও সিরাজগঞ্জ জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব খুরশিদ আলমের নামও রাজাকারের তালিকায় রয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা শুধু দুঃখজনকই নয় বর্তমান সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের চরম দায়িত্বহীনতার প্রকাশ বলে আমরা মনে করি।
রাজাকারের তালিকা তো ১৯৭২ সালেই করা উচিত ছিল। তা না করে বিগত ৪৮ বছরে শাসক সরকারগুলো এক অপরাধ করেছে আর ৪৮ বছর পরে যে প্রশ্নবিদ্ধ তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে প্রকৃত রাজাকারদের বাঁচাতেই এহেন কাজ করা হয়েছে বলে জনমনে প্রশ্ন  সন্দেহ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

বিবৃতিতে খালেকুজ্জামান অবিলম্বে বিভ্রান্তিকর, ভুলে ভরা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত তথাকথিত রাজাকারের তালিকা বাতিল করে নতুন ও সঠিক তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান। একই সাথে এই ভূয়া তালিকা প্রণয়নের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।