ঠাকুরগাঁ জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সহ সব ধরনের সহায়তা প্রদান বর্তমান সরকারের একটি যুগোপযোগী সাফল্য। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী নারী পুরুষকে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে সামাজিক নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এর পরেও সফিকুলের ভাগ্যে জোটেনি একটি হুইল চেয়ার।

শনিবার সকালে শারীরিক প্রতিবন্ধী সফিকুলের সাথে দীর্ঘ আলাপে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার সুন্দরপুর (বগুড়াপাড়া) গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৯)। প্রায় ১৭ বছর যাবৎ বসে শুয়ে থেকে জীবন চালিয়ে যাচ্ছে কষ্টের মাঝে। অতীতস্মৃতি মনে করে ছোট বেলার সুন্দর দিনগুলির কথা হার হামেসায় বলতে থাকেন সফিকুল । সে সুস্থ্য থাকাকালীন বাদাম বিক্রি থেকে শুরু করে এক সময় গ্রামে গ্রামে চুড়ি ফিতাও বিক্রি করে বাবার সাথে সংসারের হাল ধরেছিলেন। সময়ের নির্মম পরিহাসে প্রায় ১৭ বছর পর হঠাৎ হাত-পা অকেজো হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। এখন সে পুরোপুরি প্রতিবন্ধী। মানুষের বাইরে নিজেকে একজন অন্য মানুষ ভেবে কষ্টে দিন পার করতে হয় তাকে। বন্ধুরাও নিজের কাছ থেকে সরে পালিয়েছেন। ঝড়ছে হৃদয়ে মানুষিক রক্ত ক্ষরণ যা কাউকে শেয়ার করতে পারেন না।

মীরডাঙ্গী বাজারের একজন মুদি দোকানদার বলেন, বাজারে প্রায় দেখা যায় এই শারীরিক প্রতিবন্ধী সফিকুলকে। রিক্সা অথবা ভ্যানগাড়ি তে এনে কোলে করে মাঝে মাঝে দোকানের বেঞ্চে বসিয়ে রেখে যায়। আবার এসে নিয়েও যায়। ঐ বাজারের রফিকুলের চা দোকানে প্রায় দেখা যায় সফিকুলকে।

কি অবস্থা জানতে চাইলে করুন সুরে সফিকুল বলেন, “বর্তমান আমার বয়স ৩৯ বছর। আমার একটা হুইল চেয়ার প্রয়োজন ভাই। বিশ-বাইশ বছর যাবৎ অচল হইয়া পইরা রয়ছি। ইউএনও অফিসেও যোগাযোগ করেছি। তালিকায় নামও আছে। কিন্তু তবুও একটা হুইল চেয়ার পাইনি। কষ্টের শেষ নাই আমার। আশ পাশের লোকজন গুলো সফিকুলের করুন কন্ঠের কান্না ভেজা কথা গুলো শুনছিল। দোকানের মালিক রফিকুলও তার কথায় তালমিলিয়ে বলেন, চেয়ারের জন্য অনেক দিন চেষ্টা করছে লোকটি। কেউ সহযোগীতা করছেনা। প্রায় এই লোকটি ভ্যানে চড়ে আমার দোকানে চা খেতে আসে। ভ্যাওয়ালা কোলে করে আবার দোকান হতে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় আমার দোকানের প্লাস্টিকের হাতাওয়ালা চেয়ারে বসে থাকে। পারলে লোকটার জন্য একটু কিছু করেন।

সফিকুল বলেন – দেশে বিভিন্ন এনজিও, সমিতি ও দাতা সংস্থা আছে অথচ আমাকে কেউ দেখতে পায়না। আমার মত গরীব অসহায়কে একটি হুইল চেয়ার অনুদান হিসেবে দিলে হয়তো কিছুটা চলাফেরার সুযোগ পেতাম। অভাবের জন্য কিনতে পারিনা। তিনি সমাজের উচ্চ বিত্তদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমি খুব অসহায়, আমাকে একটি হুইল চেয়ার দিয়ে সহায়তা করুন!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।