মোছা. তানজিনা রহমান। ১৫ তম শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষা দিয়ে এসেই বলেছিলেন ৮০ পাবেন। নিশ্চিত হয়ে ধরে নিয়েছিলেন যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন। তার এই অতিরিক্ত আত্ম-বিশ্বাসের আরেকটা কারণও অবশ্য ছিলো। তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। গত ২২ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেলো তিনি উত্তীর্ণ হননি। সঙ্গত কারণেই তার মাঝে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা। তার প্রশ্ন লিখিত পলীক্ষায় যারা পাশ করেছে তারা কত পেয়েছে?

কারণ, এবারের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রার্থী। বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে এনটিআরসিএ’র প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই। তবে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, আমাদের স্ট্যান্ডার্ড এখন আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থী চাহিদা ছিল ১৬ হাজার কিন্তু সেখানে পাশ করেছে ১৩ হাজার। এখনও ৩ হাজার প্রার্থীর ঘাটতি রয়েই গেছে। কেউ পাস করলে কীভাবে তাকে আমরা ফেল করাবো? এ বিষয়টি আমার বোধগোম্য নয়। প্রার্থীরা হয়তো মনে করছে তারা অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছে। ৮০ থেকে ৮৫ নম্বর পাবে। কিন্তু কীভাবে তারা এটা বলছে বুঝতে পারছি না।

সবচেয়ে বেশি ফল বিপর্যয় দেখা গেছে কলেজ পর্যায়ে। সেখানে প্রায় ৯৩ হাজার পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ১৬০৭ জন।

এনটিআরসিএ’র বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে: শূন্য পদের তালিকা এবং কোন উপজেলায় কোন বিষয়ে শূন্য পদের সংখ্যা কত, সেসব বিষয় না উল্লেখ করেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ফলাফলে নেই কোন সাবজেক্টে কতজন পাস করেছেন, তার কোনো সংখ্যা। এমনকি যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন ঠিক কত নম্বর পেয়ে সেই বিষয় নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

তানজিনার মতো অনেক শিক্ষার্থীদের দাবি, ১০০ নম্বরের উত্তর দিয়ে গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে ৮০-৮৫ নম্বর পাওয়ার আশা করলেও কৃতকার্য হতে পারেননি তারা।

১১তম ও ১২তম নিবন্ধনে পাস করা অনেকে মানোন্নয়নের জন্য অংশ নিয়েছিলেন এ পরীক্ষায়, তাদের অনেকেও কৃতকার্য হতে পারেনননি বলে জানা গেছে। এমনকি এনটিআরসিএ সনদপ্রাপ্ত যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন কলেজে কর্মরত রয়েছেন তাদের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন অনেকে।

এমন প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ ফল সংশোধন করে তা পুনরায় প্রকাশেরও দাবি করেছেন।

আয়েশা খাতুন নামে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন: পরীক্ষা দিয়ে ভেবেছিলাম মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থাকবো। সেখানে কী করে ফেল করি। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কলেজ পর্যায়ে পাশের হার ১.৭৪% এই তামাশার মানে কী? তাও আবার এনটিআরসি এর মতো পরীক্ষায়। যেখানে বিগত পরীক্ষাগুলোতে ৪০% মার্কসেই পাশ করিয়েছে। হয়তো এই পাস সার্টিফিকেট দিয়ে (৪০% মার্কস) চাকরি হবে না কিন্তু অনেক কলেজে অ্যাপ্লিকেশন এর জন্য এনটিআরসিএ পাস সার্টিফিকেট চায়। সেখানে তো অন্তত হেল্প হতো।

তিনি বলেন: আগের নিয়ম পরিবর্তন করে থাকলেও কেনো সেটা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে নাই। আর পোস্ট খালি না থাকলে কেন এভাবে পরপর সার্কুলার দেয়।

এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মো: আব্দুল মাজিদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেছেন: খাতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেওয়া হোক। আমার পঠিত বিষয় ছিলো ইংরেজি। সেখানে কমপক্ষে ৭৫ নম্বর পাবো এমনটাই আশা ছিলো। অথচ আমি অকৃতকার্য হয়েছি। কোন সাবজেক্টে কতজন পাশ করলো কিছুই উল্লেখ নেই ফলাফলে। কোনটাতে কত শূন্য পদ ছিলো তাও উল্লেখ নেই। এটা খুবই হতাশার।

যে যে জেলা-উপজেলায় শূন্য পদ নেই সেসকল জেলার প্রার্থীদের আবেদন করার দরকার নেই, সেটা সার্কুলারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। লিখিত পরীক্ষার ফল শূন্য পদের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে নাকি জাতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে সে বিষয়টা স্পষ্ট করার উপর জোর দিয়েছেন তারা। লিখিত পরীক্ষার ফল নম্বরসহ প্রকাশের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

১৫তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করেই ১৬তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

অনেকে দাবি জানিয়েছেন ১৫তম লিখিত পরীক্ষার ফল সংশোধন করে পুনরায় ফল প্রকাশের।এছাড়া উপজেলা ভিত্তিক তালিকা প্রকাশের। প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভার নির্দিষ্ট পাশ করার নম্বর উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি শিক্ষার্থীদের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।