ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  টানা দুই মাস ধরে বন্ধ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে আনুষ্ঠানিক পাঠদান। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধান দুটি বিকল্প নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারকরা। প্রথম বিকল্প হচ্ছে- করোনার আক্রমণ দ্রুত শেষ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। সিলেবাস কমিয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল ছুটি বাতিল করে শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করা। দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে- চলতি শিক্ষাবর্ষ (২০২০) আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো। এতে বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ (২০২১) মার্চ মাসে শুরু হবে। নীতিনির্ধারকরা দ্বিতীয় বিকল্পের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি)। এনসিটিবির শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা প্রথম বিকল্পের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সিলেবাস কমানোর বিপক্ষে তারা।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রতিটি শ্রেণির সিলেবাস ওই শ্রেণির নির্ধারিত দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। সিলেবাস কমানো হলে নির্ধারিত জ্ঞান অর্জিত হবে না। এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। এ ছাড়া তাড়াহুড়ো করে সিলেবাস শেষ করলে শিক্ষর্থীরা ওই জ্ঞান ধারণ করতে পারবে না। তাই তারা শিক্ষাবর্ষ অন্তত দুই মাস বাড়ানোর পক্ষে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েকটি সভা হয়েছে। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। সেখানে মূলত দুটি প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু কবে নাগাদ করোনার প্রকোপ শেষ হবে আর কবে স্কুল-কলেজ খুলবে, সেটার ব্যাপারে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা না পেলে সামনে এগোনো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলে দেওয়া হয়, তাহলে এনসিটিবির প্রস্তাব ছিল, চলতি শিক্ষাবর্ষকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। ফেব্রুয়ারিতেই বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়া। এতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়ে ও শিখে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হতে পারবে। আর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের মার্চ থেকে শুরু করা। আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন ধরনের ছুটি কমিয়ে ১০ মাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা। তবে বিকল্প প্রস্তাবও এসেছে। সেখানে ২০২০ সালের মধ্যেই সব পরীক্ষা শেষ করার কথা বলা হয়েছে। এতে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা ও ঐচ্ছিক ছুটি কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে, সেটা মোটামুটিভাবে জানতে পারলে এনসিটিবি চূড়ান্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।’

গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার কারণে বন্ধ। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নানা কারণে এসব ক্লাস শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, এসব ক্লাসে শিশুদের মন নেই। একই ক্লাস বারবার পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে। ক্লাসে ভুল পড়ানো ও ভুল অঙ্ক করানোর ঘটনাও ধরা পড়েছে। নিম্নমানের অনুষ্ঠান নির্মাণ, কারিগরি ত্রুটি, শিক্ষকদের বাচনভঙ্গিতে গুরুতর ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন দেখা ও ডিশ-কেবল সংযোগ নেওয়ার সামর্থ্য নেই। এসব কারণে এসব অনুষ্ঠান আদতে কোনো কাজে আসছে না।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরাসরি ক্লাসের বিকল্প টেলিভিশন কিছুতেই হতে পারে না। অনলাইন শিক্ষা ও টেলিভিশন শিক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অভ্যাসও নেই।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাঠদানের পাশাপাশি এ বছরের এইচএসসি, জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে সংকট। শিক্ষার্থীরাও বিপাকে। এই পরীক্ষা শেষে তারা একটি সার্টিফিকেট পায়। ফলে সবাই এ পরীক্ষায় ভালো করতে চায়। ‘এ প্লাস’ পেতে বছরজুড়েই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের কোচিং-প্রাইভেট পড়ে। দিনরাত পড়ালেখা করে। কিন্তু এবার সবকিছুই বন্ধ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, তার আগে নয়। খোলার অন্তত ১৫ দিন পর থেকে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এনসিটিবির সঙ্গে বসে অন্যান্য পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা একটি ভালো সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু করোনার কারণে এই পরীক্ষাসূচি স্থগিত করা হয়। আগে হরতাল-অবরোধেও একাধিকবার পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। কিন্তু স্থগিতের দিনই পরিবর্তিত তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসে গতিবিধি বোঝা না যাওয়ায় নতুন কোনো পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী। এমনকি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের কথা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না।

প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-পিইসি ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী-জেএসসি পরীক্ষা। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা এগোচ্ছে না। এ অবস্থায় সিলেবাস শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

আমাদের বাণী ডট কম/১২ মে  ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।