আওয়ামী লীগ পুতুল ভিসির পক্ষ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে প্রকাশ হন। শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি নিজেই জানান, অসুস্থ ছিলেন না বরং মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তিনি এই সময় কাটিয়েছেন। তাই বুধবার তড়িঘড়ি করে তিনি রওনা দিলেন কুষ্টিয়া। আবরারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দিলেন না রায়ডাঙ্গা গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষের বাধায় ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন ভিসি। কিন্তু তার এই আগমনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ।’

‘আওয়ামী পুতুল ভিসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে এর আগে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন-ভিসি অসুস্থ, তাই আবরারের লাশ দেখতে আসতে পারেননি’। অথচ ভিসি বলেছেন, তিনি সুস্থ ছিলেন। তাহলে কে মিথ্যাবাদী সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নাকি ভাইস চ্যান্সেলর? আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীদের প্রধান যোগ্যতা তারা মিথ্যায় পারদর্শী। সত্যকে সহ্য করতে পারে না।’

‘এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যেও তা প্রমাণ হয় তিনি দেশের শিক্ষামন্ত্রী নন, তিনি শিক্ষা ধ্বংসের মন্ত্রী।’

আবরার ফাহাদ হত্যার প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘ভিসির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা। আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুয়েট প্রশাসন জিডি করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কি জিডি করতে হয়? এটা আবরারের লাশের প্রতি রসিকতা। এতে ৩০২ ধারায় মামলা করা যেতো। বুয়েট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে হয়-এই হত্যাকাণ্ডে তাদের কোন দায় নেই। উপাচার্য, প্রক্টোর ও ছাত্রবাসের প্রভোষ্টরা মনে করেন তাদের দায়িত্ব ছাত্রলীগের নেতাদের রক্ষা করা।’

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দায় এড়ানোর জন্য বললেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়। তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে হয়তো তাই লেখা রয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বিপদে পড়লেই জনগণকে ধোকা দিতে ‘ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়’ এই কথা বললেও দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয় প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভবন-গণভবনে বসে। আবার গণভবনে বসেই ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতার নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে সরকার ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আর একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে ছাত্রলীগকে জঙ্গি সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। এখন ছাত্রলীগকে তৈরি করা হয়েছে বধ্যভূমির ঘাতক হিসেবে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশের ছাত্র সমাজ এসব অনাচার আর মেনে নেবে না। সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের স্লোগানের ভাষা শুনুন। ক্ষমতাসীনদের জুলুম এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের রক্তে আগুনজ্বলা দ্রোহ দেখুন। জনগণের আওয়াজ শুনুন। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়াজ উঠেছে, আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে। আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে। কোন আন্দোলন যেমন ব্যর্থ হয়না, তেমনি দেশবিরোধী চুক্তি ও শহীদ আবরারের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনও ব্যর্থ হবেনা ইনশা-আল্লাহ।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্দোলন কেন? আমি একজন মা হিসাবে আবরার হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছি।’ কিন্তু উনি যদি আবরারের মা হন তাহলে তিনি প্রথমেই দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করবেন এবং আবরারের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিবেন। আর ছাত্রলীগকে হত্যা ও ঘাতকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাদের অমানুষ না বানিয়ে হাতে বই-খাতা তুলে দেবেন। উনার কথা শুনে দেশের মানুষের স্মরণ হয়েছে কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা। প্রধানমন্ত্রী তখনও কত রকম ঘোষণা অঙ্গীকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন শেষ হয়ে গেলে তাদের দাবি পূরনতো দুরে থাক কেবল কটাক্ষ আর উপহাস করেছেন।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।