নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা যাবেনা বলে মন্তব্য করে বলেন, কিন্তু করোনা প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সমালোচনা করলেই আওয়ামী লীগ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

আজ বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল ২০২০)  বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান উপস্থিত ছিলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহামারী ‘নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)’ পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সামান্য উঁচু-নীচুর ব্যবধানেও যেখানে মানুষ মানুষকে প্রতিপক্ষ-প্রতিযোগী ভাবতো, আজ মৃত্যুর ভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের বিভেদহীন দূত হিসেবে প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে নতুন নতুন মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। লাখ লাখ মানুষকে সংক্রমণ আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু বিশ্বকে আজ এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে।

তিনি বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে ১৭৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হচ্ছে বলে স্বীকার করলেও তা মৃদু মাত্রায় রয়েছে বলে দাবী করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকার বলছে-সবকিছু নিয়ন্ত্রণে, পশ্চিমা মিডিয়া বলছে-আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। মৃত্যু হানা দিচ্ছে দেশে দেশে। আর করোনা যদি এখনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। ইতোমধ্যে বিদেশী কুটনীতিকরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন।

আমরা মনে করি সরকারের নীতির কারণেই দেশের করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র ফুটে উঠছে না। ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। আজকের পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, গতকাল ২৪ ঘন্টায় করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আর সরকারী হিসাবে মারা গেছে একজন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এক্ষেত্রে পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা-হঠাৎই বাড়তে পারে ভয়াবহতা। সেক্ষেত্রে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া, আরো বেশি বেশি টেস্ট করে পজেটিভ রোগী খুঁজে আইসোলেশনে নিয়ে আসা কাজে আসতে পারে। সেনাবাহিনী আজ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি-সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। আজ বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল ২০২০) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান। ব্রিফিংয়ে ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাস আছে বলে শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। তবে নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি।

আমাদের বাণী ডট কম/০২ এপ্রিল ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।