৭৫ বছরের খবিরুন্নেসার স্বামী আবদুল হামিদ খান মারা গেছেন বছর দুয়েক আগে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই আছে আলাদা সংসার। বাবা মারা যাওয়ার পরে সহায়-সম্পত্তি সব ভাগ বাটোয়ারা করে নিলেও মায়ের দায়িত্বটা সেভাবে কেউ নেননি। ফলে আজ এ ঘর, কাল ও ঘর করে করে শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয় গোয়াল ঘরে। মানসিক সমস্যার অভিযোগ এনে গত পাঁচ মাস ধরে গোয়াল ঘরেই তাকে বেঁধে রাখা হয় শেকল দিয়ে।

বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের চরধুপতি এলাকার অমানবিক এই খবর পেয়ে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করে এক মেয়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। অসুস্থতার অজুহাতে খবিরুন্নেসাকে ছেলেরা ৫ মাস ধরে গোয়াল ঘরে আটকে রাখেন। অথচ কানে একটু কম শুনলেও তারা তাকে স্বাভাবিকই জানতেন। তাদের অভিযোগ মূলত জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা হওয়া ছেলেদের কেউ বৃদ্ধ মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নন বলেই এমন আচরণ করেছেন। ওই গোয়াল ঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেওয়া হতো।

তবে খবিরুন্নেসার দুই ছেলে ও তাদের পরিবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ছোট ছেলে বাচ্চু দাবি করেন, তিনি মায়ের ঠিকমতোই ভরণ-পোষণ দিচ্ছেন। মায়ের মাথায় সমস্যা আছে বলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

গৌরিচন্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও তার ভরণ-পোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে ব্যাপারে ছেলেদের ডেকে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এ সময় চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধাকে ২০০০ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি চরম অমানবিক। এটি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া কিছু না। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দিয়ে ছেলেদের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছেলেরা যাতে তার মায়ের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ না করতে পারেন তার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।