নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  সরকারি বরিশাল কলেজের নাম মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে সহস্রাধিক ছাত্র, শ্রমিক, নারীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ ও মিছিল, ডিসি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলা শাখা।

আজ বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর অশি^নী কুমার হলের সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বাসদ জেলা আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট; মানিক হাওলাদার, সংগঠক, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট; জোহরা রেখা, সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম; সাগর দাস, সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বরিশাল জেলা; দুলাল মল্লিক, সভাপতি, বরিশাল রিক্সা-ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি-২৩২৪); মো. রফিক, সভাপতি, বরিশাল জেলা ভ্যান শ্রমিক ফ্রন্ট; কাজল ঘোষ, সংগঠক, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র; সাইফুল ইসলাম, সংগঠক, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ; আবু তাহের, সভাপতি, গেট গ্রিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ শ্রমিক ইউনিয়ন; লামিয়া জাহান, সংগঠক, শিশু কিশোর মেলা; রেজওয়ান আহমেদ, সংগঠক, শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পাঠাগার। এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার, বিশিষ্ট নাগরিক নজরুল ইসলাম খান; বাসদ মার্কসবাদীর সাইদুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি সম্পা দাস, ছাত্র মৈত্রী জেলা সভাপতি মিন্টু দে, টিইউসির সহসাধারণ সম্পাদক তুষার সেন।

ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের নামে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণের দাবিতে কয়েক যুগ ধরে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করার সুপারিশ জারি হওয়াটা শুধু মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের মতো বড় মানুষের স্বীকৃতিই নয় পাশাপাশি বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির স্বীকৃতিও বটে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাই এবং অবিলম্বে এই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। একই সাথে এই কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে মিউজিয়াম ও ভাস্কর্য করারও দাবি জানাচ্ছি।

ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে মহাত্মা অশি^নী কুমারের নামে বরিশাল কলেজের নামকরণের দাবিতে এই বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করেছে। এমনকি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপনও করেছিলেন একজন আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য। বিভিন্ন সময় এই আন্দোলনের বিরোধীতা করেছে মৌলবাদী শক্তিরা। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তি বলে দাবিদার আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মীরা এই নামকরণের বিরোধীতা করছে যা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার বিষয়। মহাত্মা উপাধি প্রাপ্ত বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ অশি^নী কুমার অবশ্যই দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বরিশালের রত্ন। এই অশ্বিনী কুমারের নামে নামকরণের সুপারিশও করেছে আওয়ামীলীগ সরকার যা বিভিন্ন মহলে সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু সেই দলেরই কিছু নেতারা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এই যৌক্তিক নামকরণের বিরোধিতা করছে। যা আমাদের বরিশালবাসীর কাছে বিষ্ময়।

ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী আরও বলেন, বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আকর্ষণীয় আইন পেশা ছেড়ে মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে গেছেন, পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রজমোহন স্কুল (১৮৮৪), ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯)। দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করে নিয়েছিল। তাঁর তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত হয়েছিল। বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অবিস্মরনীয় হয়ে আছে। আজকের বরিশাল কলেজ ছিল অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন। এই বাসভবনের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল। বরিশালের প্রগতিশীল মানুষজনের প্রতিবাদের পরেও তার বাসভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অশ্বিনী কুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় কিছুই নেই। তাই বরিশালের প্রগতিশীল ও সর্বস্তরের সচেতন মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ এই সংগ্রামি ও মহান ব্যক্তি অশি^নী কুমারের নামে করার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিবেচনাধীন থাকার কথা আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি। যা আমাদের আশান্বিত করেছে। আবার আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি কুচক্রি মহল মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণের বিরোধীতার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। আমরা এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশি^নী কুমারের নামে করার প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি জানাই।

সমাবেশ শেষে সহস্্রাধিক ছাত্র, শ্রমিক, নারীদের একটি মিছিল নগরির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

আমাদের বাণী ডট কম/১৫ জুলাই ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।