নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা  মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র উপজেলায় শীর্ষ পদে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ৪৪৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মধ্যে ১৪০ জনই নারী। জেলা প্রশাসক পদে আছেন আট নারী। আর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে সচিব পদে আছেন দশ নারী কর্মকর্তা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সচিবালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নারী কর্মকর্তা যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব ৮৫ জন (পুরুষ ৪৩০), যুগ্ম সচিব ৮২ জন (পুরুষ ৫৫৬), উপসচিব ৩৫০ জন (পুরুষ ১৩৪০), সিনিয়র সহকারী সচিব ৪৪৮ জন (পুরুষ ১০৭০) ও সহকারী সচিব পদে প্রায় ৫০০ (পুরুষ ১১০০) নারী কর্মকর্তা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

নারী ইউএনও

বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে প্রথম নারী সচিব হয়েছিলেন খোদেজা আজম। বর্তমানে সরকারে ৭৭ জন সচিবের মধ্যে আটজন নারী। আর ৬৪টি জেলার মধ্যে আটটির জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারী কর্মকর্তা।

সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন দুই বছর ধরে নরসিংদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। তিনি ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন পদক ও ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের পদক পেয়েছেন।

মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। এই বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে রোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে নারী কর্মকর্তারা ভালো করছেন। ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ কর্মকর্তাদের চেয়েও কাজে গতি ও চাপ বহনে বেশি সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছেন। এ কারণে ইউএনও পদে নারীদের পদায়ন পর্যায়ক্রমে বাড়ছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ইউএনও লুবনা ফারজানা বলেন, ‘দিন-রাতের যেকোনো সময় আমাকে বাইরে যেতে হয়। নারী হিসেবে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। ভৈরবে এসি ল্যান্ড হিসেবেও একজন নারী আছেন। এলাকার মানুষজন আমাদেরকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। অনেক সেবাপ্রার্থী আবার সামনাসামনি প্রশংসাও করেন।’

খাদ্যসচিব ও বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি ড. নাজমানারা খানুম বলেন, ‘একজন নারী হয়ে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আসা খুব সহজ ব্যাপার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারছেন। আর শুধু প্রশাসন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা ভালো করছেন।’

উইমেন নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, ‘নারী কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতে পারবেন কি না, এমন সন্দেহ একটা সময়ে পুরুষদের মধ্যে ছিল। একইভাবে নারীরাও দায়িত্ব নিতে দ্বিধা করতেন। এখন এই দুই জায়গাতেই উন্নতি হয়েছে।’

এছাড়াও মাঠ প্রশাসনে আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে ডিডিএলজি পদে ১১ জন, এডিসি ৩৮ জন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চারজন, সহকারী কমিশনার ৪১, সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) ১৩০, এলএ ১০, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ২৪ এবং জেলা পরিষদ সচিব হিসেবে দুই নারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রশাসনে সাত হাজার ৫৩২ জন কর্মকর্তার মধ্যে এক হাজার ৮৬০ জনই নারী কর্মকর্তা।

আমাদের বাণী ডট কম/০৮ মার্চ ২০২০/টিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।