সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উল্লাপাড়া স্টেশনে পয়েন্টিং সিগন্যালের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিনটি রেলপথের পাশে উল্টে পড়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে ওই আগুন লাইনচ্যুত আরো ৩টি বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত জানালা এবং দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে ট্রেনের লোকো মাস্টার এবং সহকারী লোকো মাস্টারসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রংপুর মিটার গেজের এই এক্সপ্রেসটি ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাচ্ছিলো। উল্লাপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের ৫০ মিটার দূরে রেলপথ পরিবর্তনের স্থানে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে লাইনচ্যুত ৭টি বগির মধ্যে দুটি বগি মূল রেলপথ থেকে অন্তত ১৫ মিটার দক্ষিণ দিকে চলে যায়। ট্রেনে মোট ১৪টি বগি ছিলো।

ঘটনার পরপরই উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনা স্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে সিরাজগঞ্জ ও কামারখন্দ ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নেভানো এবং উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের মালামাল সংরক্ষণের জন্য ট্রেনটি ঘিরে ফেলে।

সিরাজগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের উপ-পরিচালক মঞ্জিল হক জানান, দুর্ঘটনার পর আধা ঘন্টার মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। কিছু যাত্রী আহত হয়েছে, তাদেরকে স্থানীয় লোকজন চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে।

উল্লাপাড়া ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার নাদির হোসেন জানান, দুর্ঘটনার পরে প্রথমে রংপুর এক্সপ্রেসের উল্টে যাওয়া ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং আগুন দ্রুত পাশ্ববর্তী বগি গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ৩টি বগির শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং অপর ২টি বগি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে থাকা উল্লাপাড়া থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, তারা দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান এবং ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। ঘটনার পরে উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান ও পৌর মেয়র এস.এম. নজরুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে সহযোগিতা করেন।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান জানান, ট্রেনের ড্রাইভারসহ ৫/৬ জন রেলকর্মী আহত হয়েছেন। এদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রেলপথের ত্রুটির কারণে এবং সিগন্যাল ভুলের কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। তবে উল্লাপাড়া স্টেশনে দায়িত্বরত সহকারী স্টেশন মাষ্টার রফিকুল ইসলাম সিগন্যাল ভুলের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, রেলপথের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ দিকে দুর্ঘটনার পর বেলা ২টা থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে উল্লাপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের কয়টি বগি দাঁড়িয়ে থাকায় প্রায় ২ ঘন্টা পাবনা-বগুড়া ও পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।