এম বুরহান উদ্দীন, শৈলকুপা,(ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা; ’আমরা বাজার পরিষ্কার করে টাকা পাই তা দিয়েই যতটুকু সম্ভব নিজের পেটের ক্ষুধা মেটাই। করোনা মহামারির জন্য বাজার বন্ধ, বন্ধ সব দোকান পাট, বসছে না হাট-বাজার। আমাদের খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। আমাদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করুন’। ঠিক এমনিভাবে নিজেদের কষ্টের কথা জানালেন জেলার শৈলকুপা উপজেলার ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের লাঙ্গলবাধ, মালিথিয়া গড়াই নদীর পাশে হরিজন সম্প্রদায়ের কলোনীর বসবাসরত সাধারণ মানুষ।

পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিরোধের জন্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সবাইকে থাকতে বলা হয়েছে নিজেদের বাড়িতে। তাছাড়া প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়াটাও নজরে রেখেছেন প্রশাসন। আর সেখানেই বিপাকে পড়েছে শৈলকুপার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের লাঙ্গলবাধ, মালিথীয়া এলাকায় বাস করা হরিজন সম্প্রদায়ের ১০টি পরিবারের শিশুসহ প্রায় ৩০ জন। তাদের একমাত্র আয়ের রোজগার ঝাড়– দিয়ে বাজার পরিষ্কার করা। তারপর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে মালামাল বিক্রি করতে আসা মানুষের কাছ থেকে তুলা উঠানো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বাজার ঘাট বন্ধ থাকায় তারা পড়েছে চরম বিপাকে। পারছে না এখন আর লাঙ্গলবাধ, চতুড়িয়া, ডাউটিয়া, কাতলাগাড়ী বাজার পরিষ্কার করতে। আসছে না ক্ষুধা মেটানোর জন্য খাবার।

খোজ নিয়ে কলোনীতে ঢুকতেই দেখা যায়, মাথা গুঁজে ঘরের সামনে বসে আছেন বয়স্ক কয়েকজন। তাদের কাছে করোনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, শুনেছি কি না কি ভাইরাস এসেছে। কি আর করবো বয়স হয়ে গেছে এমনিতেই বাঁচবো না বেশিদিন, আছি যতদিন ভাইরাসে না মরবো ক্ষুদার যন্ত্রণায়। এ কথা বলেই অঝরে কেঁদে উঠলেন।

হরিজন সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির প্রধান মন্টু লাল বলেন, এলাকার সব বাজারঘাট বন্ধ থাকার কারণে আমাদের আয়-রোজগার নেই। আমরা এখন ক্ষুধার যন্ত্রনায় আছি। ঘরে যা ছিল সব প্রায় শেষের দিকে। শুনেছি, সরকার নিম্ম আয়ের মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত আসেননি কেউ। বাজারঘাট ঝাড়– দিয়ে যা পাই তাই দিয়ে আমাদের চলে। এখন সবই বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে আমরা এমনিতেই মরে যাবো।

অপরদিকে, নিজের উদ্দ্যোগে এই হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন শিক্ষানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মেহেদী হাসান নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক। করোনা সর্তকতায় দিয়েছেন তাদের সাবান ও লিফলেট। তিনি জানান, খবর পেয়ে এখানে এসে তাদেরকে করোনা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক লিফলেট দিয়েছি। নিজ উদ্দ্যোগে যতটা সম্ভব তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। সরকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমাদের বাণী ডট কম/৩০ মার্চ ২০২০/ঝিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।