ভাগ্যের পরিবর্তনে হাজারো বাধাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন বলে জানালেন অবহেলিত নারীরা। একসময় জৌলুষের অলংকারের আবদ্ধ ছিলো কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার মুড়িগ্রাম। গ্রামের নাম মাছুয়াঘাটা হলেও লোকেরা মুড়িগ্রাম হিসেবেই চেনেন গ্রামটিকে। সারাবছরই চলে মুড়িভাজার কাজ। শীত, বর্ষা কিংবা প্রচন্ড দাবদাহেও বিরাম নেই বালেন, ঝাঁঝড়, চুলাসহ মুড়িভাজায় নিয়োজিত নারীদের।

হাজারো বাধা আর প্রতিকূলতা ভেদ করে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে মুড়ি ভাজছে কুষ্টিয়ার খোকসার মুড়িগ্রামের নারীরা। ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে উপজেলার মাছুয়াঘাটার মুড়িগ্রামের ঐতিহ্য।

সরেজমিনে উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার মাছুয়াঘাটার মুড়িগ্রামের গিয়ে দেখা যায় নারীদের কঠোর সংগ্রামের চিত্র। ভাগ্যের পরিবর্তনে এরা হাজারো বাধাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন বলে জানালেন অবহেলিত এসব নারীরা। একসময় জৌলুষের অলংকারের আবদ্ধ ছিলো মুড়িগ্রাম। গ্রামের নাম মাছুয়াঘাটা হলেও লোকেরা মুড়িগ্রাম হিসেবেই চেনেন গ্রামটিকে। সারাবছরই চলে মুড়িভাজার কাজ। শীত, বর্ষা কিংবা

প্রচন্ড দাবদাহেও বিরাম নেই বালেন, ঝাঁঝড়, চুলাসহ মুড়িভাজায় নিয়োজিত নারীদের। একটানা চলে মুড়িভাজার কাজ। মুড়িভাজায় নিয়োজিত গোলাপী, সাবিত্রী, আশা, যুথিসহ অনেকেই একই সুরে বলেন, আমরা মুড়িভাজায় এখন আর আগের মতো লাভ হয় না। তবুও জীবিকা নির্বাহ করার জন্য অন্য কোন কাজ না করতে পারায় আমরা এ পেশাকেই আঁকড়ে ধরে আছি। আমরা কোন সংস্থা থেকে কোন ধরনের সাহায্য পায় না। মোটের উপর আমরা খুবই কষ্টে আছি।

মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার মুড়িভাজা চলে। শরিবার থেকে সোমবার মুড়ি বাজারজাতকরণ করা হয়। মুড়ি প্রক্রিয়া করার জন্য প্রাথমিকভাবে ধান বলকানো হয়। এরপর রোদে শুকানোর পরই মাড়াই করে মুড়িভাজার জন্য চাউল প্রস্তুত করা হয়। তারপর চলে মুড়িভাজার ধুম। মুড়িভাজার রাসায়সিক কারখানা থাকায় গ্রাম্য এ শিল্পটি ক্রমেই ধষে যেতে বসেছে। তবে কারখানার মুড়ির চেয়ে এ অঞ্চলের মুড়ির চাহিদা বেশী। কিন্তু দাম একই। পুঁজিবাদী কারখানা মালিকদের সাথে পালা দিয়ে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

মাছুয়াঘাটা গ্রামে ৬০ পরিবারের বসবাস। এখানকার সব পরিবারই এ পেশায় নিয়োজিত। অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। সবাই-ই হিন্দু ধর্মের অদিবাসী। অবশ্য সারা বছরের ক্ষতিকে পুষিয়ে দেয় বিভিন্ন উৎসব। রমজান মাস, ২টি ঈদ ও বিভিন্ন পূজায় এ এলাকার মুড়ি বেশী বিক্রি হয়। দামও বেশী, লাখও বেশী। অন্যান্য মাসে মুড়ির দাম ৪৫-৫০ টাকা হলেও উৎসবগুলোতে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। মুড়িগ্রামের অভিভাবক প্রদীপ মন্ডল ও রবি বলেন, এ গ্রামের মুড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ মণ মুড়ি উৎপাদন করা হয়। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নেই, নেই ভালো যাতায়াত মাধ্যম। উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত আমাদের গ্রামেরই প্রতি কারোরই মাথা ব্যাথা নেই। তবে বর্ষাকালে আমাদের বেশী কষ্ট হয়।

গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত মাছুয়া ঘাটা মুড়ি পল্লী গ্রামের প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। গ্রাম উন্নয়নের কাজ করায় এলাকার রাস্তাটি এখন পাকা হয়েছে কোথাও ইটপাড়া সলিং করা হয়েছে।
এমন হাজারো কষ্ট আর সীমাহীন দূর্দশার মধ্যেও ওরা মুড়িভাজার পেশাতেই থাকতে চায়। এজন্য ওদের মৌলিক চাহিদাটুকু প্রয়োজন আর প্রয়োজন বিত্তশালী মানুষের সামান্য সহানুভূতি। তাহলেই ওরা টিকে পারবে, সেবা করে যেতে পারবে হাজারো মানুষের।

মুড়ি পল্লীর সকলেরই প্রায় একই অভিযোগ বাজারজাতকরণের জায়গা না থাকায় মুড়ির বিক্রির প্রকৃত পারিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা দাবি করেন খোকসাতেই একটি যদি মুড়ি পল্লী বাজার তৈরি করা। যাতে মূল পল্লী লোকদের এই মুড়ি বিক্রি করার সহজ হতো। সেই সাথে মাছুয়াঘাটা গ্রাম থেকে মুড়ি বহন করার জন্য নসিমন, করিমন, আলমসাধু সহ স্থানীয় যে সকল গাড়ি গুলো রয়েছে সে গাড়ি গুলো অবাধে বিচরণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছে তারা।

সর্বোপরি শতাধিক পরিবারের জীবন মান রক্ষার্থে হাতে ভাজা মুড়ি প্রস্তুতকারী এর সকল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় অভিভাবক ও এ পেশায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।