পুলিশি অভিযানে আসামি গ্রেফতারের নামে ১০ বছরের একটি শিশুকে কান ধরে গোটা বাড়ি ঘোরানো ও চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ সব অভিযোগ করেন শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলেরা।

এ ছাড়া কুমিরাদহ বিলে দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং শতাধিক জেলে পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জেলেরা।

পুলিশি হয়রানির কারণে গত ২০ দিন থেকে পুরুষশূন্য রয়েছে জেলেপাড়া।

তাদের অভিযোগ, অতিউৎসাহী পুলিশ প্রতিপক্ষের সঙ্গে মীমাংসা করারও চাপ দিচ্ছে, অন্যথায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছর কুমিরাদহ বিলটি ৩০ লাখ টাকায় হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইজারা দেয় সরকার। জলমহালটিতে সমিতির জেলেরা ১ কোটি ৮৪ হাজার টাকার মাছও ছাড়ে। কিন্তু চৌধুরী ইসমাইল সাজ্জাদ জোয়াদ ওয়াকফ স্টেটের মোতাওয়াল্লি কাইয়ুম রেজা চৌধুরী বেআইনিভাবে বিলটি দখল করার ষড়যন্ত্র করে সাধারণ জেলেদের নামে মিথ্যা মামলায় জেল-হাজতে প্রেরণসহ জেলে পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।

শুধু তাই নয়, স্টেটের ম্যানেজার আলফাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে জেলেদের জাল, পাহারার টংঘর ও ২৩টি নৌকা জোরপূর্বক কেড়ে নিয়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিল এলাকার অপর পাড়ে বোমা হামলা চালিয়ে উল্টো জেলেদের ফাঁসানো হয়েছে বলে জানান তারা।

হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলে ইজাজ আহমেদ লিখিত বক্তব্যে তাদের প্রতি বিভিন্ন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাজিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক সেন্টুসহ সমিতির অন্যান্য জেলেরা।

জেলে সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ৫০ বছর থেকে জলমহালটি ইজারা দিয়ে আসছে সরকার। অথচ ২০১০ নিজেদের জমি দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন চৌধুরী ইসমাইল সাজ্জাদ জোয়াদ ওয়াকফ স্টেটের মোতাওয়াল্লি কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, যেটি বর্তমানে বিচারধীন রয়েছে। এই নিয়ে উচ্চ আদালের একাধিক নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জলমহলটি দখলে নিয়েছে তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ম্যানেজার আলফাজ উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এর আগে পুলিশকে অর্থ দিয়ে কিনে আমাকে জেল খাটায়। অথচ সেই মামলায় পুলিশ আমাদের নির্দোষ বলে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। পরে আপোষ মিমাংশায় মাধম্যে তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪০ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন চৌধুরী সাহেব কিন্তু সেটি তারা মানেনি।

পুলিশের হয়রনির বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, হামলা হয়েছে, বোমাবাজি হয়েছে, এসব ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি আমরা তাদের গ্রেফতার করেছি। আমরা কারও পক্ষে নই, আমরা সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে। আর আসামি গ্রেফতারের সময় পুলিশ কাউকে হয়রানি বা নির্যাতন করেনি, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

উচ্চ আদালতে নির্দেশনা থাকায় বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক এজেড নুরুল হক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।