সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেয়া না হলে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা। একই সাথে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের পুরাতন পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনটির নীতি-নির্ধারণী কমিটির এক জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সভায় ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বক্তব্যে ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে ১১তম গ্রেড ও ৩ লাখ ৪২ হাজার সহকারী শিক্ষককে ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে অধিকাংশ শিক্ষকের বেতন বাড়ার পরিবর্তে কমে যাবে। নিম্নধাপে উন্নীত স্কেলে ফিক্সেশন করলে প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কমে যাবে। তাই শিক্ষকদের দাবি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করে বেতন বৈষম্য নিরসন করা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি।

১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বেতন বৈষম্য নিরসনে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শিক্ষকদের অভিমত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেই তাদের বেতন বৈষম্য নিরসন হবে। অন্যথায় শিক্ষক নেতারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিকে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণের প্রস্তাব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপত্র প্রত্যাখ্যান করেছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের নেতারা। ওই প্রস্তাব বাদ দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ তম গ্রেডে নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবির কথা জানান শিক্ষক নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের সভাপতি শাহীনুর আকতারের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোট বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে বেতন উন্নীতকরণের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় প্রেরণ করেন; যা সহকারী শিক্ষকদের কাম্য নয়।

তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় গত ৮ সেপ্টেম্বর ১২তম গ্রেডে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই মর্মে প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেছে এবং ৭ নভেম্বর ১৩তম গ্রেডে বেতন উন্নীতকরণে সম্মতি প্রদান করে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের সভাপতি শাহীনুর আকতার জানান, ১৩তম গ্রেডে সকল শিক্ষকদের বেতন কমে যাবে এমন কি ১২তম গ্রেডেও সহকারী শিক্ষকদের ১টি টাকাও বাড়বে না। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের রায় কার্যকর হলে ১১তম এবং ১০ গ্রেডে টাকার অংকে বৈষম্য হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

তিনি বলেন, গ্রেডে বৈষম্য দূর হলেও টাকার অংকে এই বৈষম্য থেকেই যাবে। সুতরাং বেতন বৈষম্য নিরসনে ১১তম গ্রেডের কোনো বিকল্প নাই। সহকারী শিক্ষকদের দাবি অগ্রাহ্য করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ১৩তম গ্রেডের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল; সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন উন্নীতকরণের প্রস্তাব পুনরায় প্রেরণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৩তম গ্রেড মানিনা। ১৩তম গ্রেডে বেতন উন্নীত করা সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। মহাজোট ১১তম গ্রেডে বেতন উন্নীতকরণের দাবিতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে যে সময় বেঁধে দিয়েছে তার মধ্যে দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- মো. আমিনুল হক, মো. এনামুল হক, মো. এখলাচুর রহমান, আব্দুল ওহাব শেখ, সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীস, আব্দুর রউফ শাহীন, আহম্মেদ কায়সার, মো. রাসেল, মনসুর আলম টিপু, কবিরুল ইসলাম, মো. আলমেরাজ, শামসুল হক, রফিকুল ইসলাম, মো. আব্দুর রব লাবু, মো. আমিনুর রহমান, বিপ্লব চন্দ্র দাস প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।