পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। কিন্তু সে অর্থ ফেরত দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আবার এক হাজার কোটি টাকার ঋণের আবদার করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে কিছু প্রশ্ন করেছিল আইসিবির কাছে। আগের ৩০০ কোটি টাকা কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং নতুন এক হাজার কোটি টাকা কিভাবে ব্যবহার করা হবেÑ এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আইসিবি থেকে এরই মধ্যে প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে শেষমেশ ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে আইসিবির এমডি আবুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আইসিবি। বিনিয়োগ বাড়াতে তাই প্রতিষ্ঠানটি দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছিল ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এক হাজার কোটি টাকা এবং পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের কাছে ২০০ কোটি টাকা করে এক হাজার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে আইসিবি থেকে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইসিবির প্রস্তাব বিবেচনা করবে। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়ার কারণ হিসেবে আইসিবির এমডি জানান, ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলেও যথাসময়ে নবায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, পড়ন্ত পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে শেয়ার কিনে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। নিজস্ব উৎসে কুলাতে না পারলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করে অর্থের সংস্থান করা হয়। তেমনিভাবে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছিল। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয় তিন মাসের জন্য। আইসিবিকেও অনুরূপভাবে তিন মাসের জন্য ঋণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। একপর্যায়ে ঋণ নবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ আবার তিন মাসের জন্য নবায়ন করা হয়েছে।

এ দিকে ৩০০ কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আইসিবি আবার আবেদন করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করতে ব্যাংকগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ খাত। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইসিবিকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে। এবারো হয়তো একই কারণে আরো এক হাজার কোটি টাকা ঋণের অনুমোদন দেয়া হতে পারে। যদি তাই না হতো, তা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি আইসিবির আবেদনটি নাকচ করে দিতে পারত।

তবে সরকারি একটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইসিবিকে ঋণ দিয়ে খুব কম সময়ে ফেরত পাওয়া যায়। মূলত তারা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে শেয়ার কেনে। এ সুযোগে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কম দামে শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করে চলে যায়। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে আইসিবি। এরই মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে অনেক বার আইসিবিকে ঋণ দেয়া হয়েছিল; কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ফেরত দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। যেমন অগ্রণী ব্যাংক ২০১৭ সালের ৭ মে থেকে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০, ১৫০ ও ২০০ কোটি টাকা করে এক হাজার ৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু ওই সব ঋণ ছয় মাসের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এভাবে জনগণের আমানত দিয়ে আইসিবিকে ঋণ দেয়া হয় শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে। আবারো আইসিবি সোনালী, জনতা. অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছে ২০০ কোটি টাকা করে এক হাজার কোটি টাকা করে ঋণের আবেদন করেছে। কিন্তু ব্যাংক পাঁচটি এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। তবে জনগণের আমানত দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার আগে বিকল্প খাতের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। সৌজন্যে নয়াদিগন্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।