ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্র আবু সালেহ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ)। ৫১ দিন কেটে গেছে ডিএমসিএইচের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)। এখন আর কাউকে চিনতে পারেন না। মায়ের চেহারাটাই কেবল মনে আছে। বহুদিন পর মাকে দেখে কেবল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়েছে কয়েক ফোঁটা অশ্রু। মুখে কথা না ফুটলেও গড়িয়ে পড়া অশ্রুই বলছে, ‘মা! আমি সুস্থ হতে চাই, পড়াশোনা করে তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’ আবু সালেহর ভাই আবু ইউসুফ বললেন, কত স্বপ্ন ছিল আমার ভাইটির! আজ সব ম্লান হতে চলেছে। এখানে ৫১ দিন পার করে দিয়েছি আমরা, উন্নতি হচ্ছে না। আরো উন্নত চিকিৎসা ওর প্রয়োজন।
আবু ইউসুফ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ২০৪ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র আবু সালেহ। গত ১১ আগস্ট জ্বর নিয়ে বাড়ি যায়। রাতে জ্বরের প্রচণ্ডতা বেড়ে গেলে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে রক্ত পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। রক্তের সাদা কনিকা (প্লাটিলেট) ৪৫ হাজারে নেমে আসে। পরদিনই মাদারীপুর থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসার পর প্লাটিলেট বেড়ে দেড় লাখে পৌঁছে।’ আবু ইউসুফ জানান, আমরা আশাবাদী হয়ে উঠলাম যে, হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারবে আমার ভাই। আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে। কিন্তু ক’দিন পর আবার জ্বর বেড়ে গেল। শুরু হলো প্রচণ্ড মাথা ব্যথা। চিকিৎসকেরা সাধ্যমতো চেষ্টা করলেন। কিন্তু অবস্থার অবনতিই হলো না। হঠাৎ চেতনা হারিয়ে ফেলল, হয়ে গেল বাকরুদ্ধ। ১৯ আগস্ট সাধারণ বেড থেকে স্থানান্তর হলো আইসিইউ বেডে। সেই যে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা ও জ্বর বলে আমাদের সাথে কথা বলে গেছে, আর কোনো কথা বলতে পারল না। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আইসিইউ থেকে এইচডিইউ ১৩ নম্বর বেডে স্থানান্তর করা হলো। আজ (গতকাল মঙ্গলবার) এখানে কেটে গেল ৫১ দিন।
গতকাল দুপুরে ডিএমসিএইচের এইচডিইউ বেডে গিয়ে দেখা গেল- আবু সালেহ শুয়ে আছেন বিছানায়। প্রশ্রাব করার জন্য ক্যাথেটার লাগানো শরীরে। চলৎশক্তিহীন হওয়ায় প্যাম্পার্স পরানো হয়েছে পায়খানার জন্য। কোনো হুস নেই। উপর দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।