ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছয় মাস ধরে উপবৃত্তির অর্থ পাচ্ছে না। সব শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা ও তাদের ঝরে পড়া রোধ করতে সরকার এই উপবৃত্তি চালু করেছিল। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশি পড়ালেখা করে। করোনার কারণে দরিদ্র পরিবারগুলোতে এখন চরম আর্থিক টানাপোড়েন। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এই দুর্দিনে উপবৃত্তির যৎসামান্য টাকা হাতে পেলে বড় উপকার হতো।

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও বন্ধ করা হয়েছে। দেশের ৬৬ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৩৩ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের সবাই সরকারের দেওয়া উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। তারা সর্বশেষ উপবৃত্তির অর্থ হাতে পেয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর আর কোনো টাকা পায়নি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি তিন মাসের উপবৃত্তির অর্থ একসঙ্গে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ছয় মাসের উপবৃত্তি বকেয়া। এই টাকা শিক্ষার্থীরা এখনও পায়নি। এ ছাড়া জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী `মুজিববর্ষ` উপলক্ষে নতুন জামা, ব্যাগ ও জুতা কেনার জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বছরের চার মাস পার হতে চলেছে, এ টাকাও ছাত্রছাত্রীরা এখনও পায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার অথবা মানসম্মত টিফিন (পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিস্কুট) দেওয়া হতো। ইউনেস্কো ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপিও) এই বিস্কুট দিত। শহরাঞ্চলের বস্তি ও ছিন্নমূল শিশুসহ সারাদেশের দরিদ্র শিশুরা সকালে কোনো কিছু না খেয়েই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাই এই খাবার দেওয়া হতো। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিস্কুট ও রান্না করা খাবার বিতরণও বন্ধ। এসব ছিন্নমূল ও দরিদ্র শিশুও এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। হতদরিদ্র অনেক অভিভাবকের কোনো কাজ না থাকায় তারা ছেলেমেয়েদের এখন দু`বেলা খাবার দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিমত, এই দুর্যোগের সময়

তাদের প্রাপ্য উপবৃত্তির টাকা পেলে দরিদ্র পরিবারের জন্য অনেক উপকার হতো।

নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বাহার উদ্দিন বলেন, এই দুর্যোগের সময় উপবৃত্তির টাকা পেলে শিশুদের অনেক উপকার হতো। কারণ, গ্রামের অভাবগ্রস্ত অধিকাংশ লোকের হাতে এখন কোনো কাজ নেই, আয়ও নেই। একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা রূপালী ব্যাংকের `শিওর ক্যাশ`-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইল ফোনে পাঠানো হতো। আমরা ছয় মাসের টাকার জন্য শিক্ষার্থীদের মায়েদের শিওর ক্যাশের মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাসময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছি।

দেশের পশ্চিমাঞ্চল হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গরিব পরিবারের। করোনার সময় তাদের এই টাকাটা পেলে অনেক উপকারে আসবে।

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া খাতুন ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হোসেনের মা রোজিনা খাতুন সমকালকে বলেন, `হামরা গরিব। হামার দিনই চলে না। হামার দুই ছৈল স্কুলে পড়ে। উপবৃত্তি ট্যাকা পাইলে উপকার হইতো।`

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, সরকারের উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এই দুর্যোগকালে কিছু টাকা হাতে পেলে তারা অবশ্যই খুশি হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইল ফোনে প্রতি মাসে এক সন্তানের জন্য ১০০ টাকা, দুই সন্তানের জন্য ২০০ টাকা ও তিন সন্তানের জন্য ২৫০ টাকা হারে উপবৃত্তির টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের জন্য মাসে ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই উপবৃত্তি প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে ১৫০ টাকা করার কথা রয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষা উপকরণ কেনার টাকা চলতি বছর জানুয়ারি থেকে চালু করা হবে। গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবের সময় এই টাকা দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল।

উপবৃত্তির অর্থের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত উপবৃত্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি তিনি দেখবেন।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অর্থ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই এখন দ্রুত প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক হচ্ছে না। যে কোনো সময় বিশেষ অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে অতি দ্রুত প্রকল্পটির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সৌজন্যে সমকাল

আমাদের বাণী ডট কম/০৪ মে ২০২০/সিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।