অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় র‍্যাব

নারায়ণগঞ্জে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার উদ্দেশে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে মসজিদের ইমামসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টায় ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সহযোগী রমজান আলী (৪৯), মো. গিয়াস উদ্দিন (৫২), হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি (৫৫), মো. মোতাহার হোসেন (৪৮) ও মো. শরিফ হোসেন (৪৫)।

র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) মো. আলেপ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা চাঁনমারি এলাকায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে বোরকা পরে এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে জানায়, মসজিদের ইমাম কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর ইমামের অনুসারীরা তিনি ও তার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশে হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করছে।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় র‍্যাব। পরে ফতুল্লার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইমাম ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স ৮ বছর। সে একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। রাতের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটির অসুখ ছিল তার। কবিরাজি চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় লোকমুখে শুনে তার বাবা অভিযুক্ত ইমাম ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামের কাছে ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়ার জন্য নিয়ে যান।

একাধিকবার ফজলুর রহমানের ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ায় অভিযুক্ত ইমাম তাদের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ি বন্দি’’ চিকিৎসা করে আসে। ঘটনার আগের দিন শিশুটির বাবা মুঠোফোনে চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে তাকে পরদিন ফজরের আযানের সময় মসজিদে যেতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী পরদিন সকালে মেয়েটিকে নিয়ে মসজিদে গেলে ফজরের নামাজের পর অভিযুক্ত ধর্ষক শিশুটিকে মসজিদের ৩য় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে শিশুটির বাবাকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগরবাতি ও মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেয়।

ঘটনার সময় দোকান খোলা না থাকায় মোম ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না শিশুটির বাবা। এদিকে, কালক্ষেপণের জন্য ধর্ষক ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে পান আনতে বলে এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনকে ফোন করে মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দিতে বলে।

এই সুযোগে শিশুটির হাত বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ধর্ষণ করে। প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেওয়া হয় এবং গলায় ছুরি ধরে কাউকে না জানানোর হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাড়াহুড়া করে তাদেরকে বিদায় করে দেয় ইমাম ফজলুর। ধীরে ধীরে শিশুটির শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একসময় বিষয়টি তার বাবা মাকে খুলে বলে মেয়েটি। ভুক্তভোগী পরিবার বিচার দিতে মসজিদে গেলে মসজিদ কমিটির কয়েকজন ও ইমামের লোকজন তাদেরকে হেনস্থা করে এবং থানা বা হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়।

শিশুটির অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে গোপনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে অভিযুক্ত ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা একাধিকবার শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা চালায়।

র‍্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. আলেপ উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।