বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ দিয়ে আট বছর ধরে চাকরি করছেন সহকারী শিক্ষক মো. কবির হোসেন। এমপিওভুক্ত হয়ে ইতোমধ্যে ১২ লক্ষাধিক টাকা বেতনও নিয়েছেন। জাল সনদ নিয়ে চাকরি করার বিষয়টি ধরা পড়ার পর কবির হোসেনকে উত্তোলন করা বেতনের টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ওই টাকা ফেরত না দিয়ে সম্প্রতি পালিয়ে গেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কবির হোসেনের পক্ষে রয়েছে। এ কারণেই তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী ওই মহল কবির হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তাই জাল সনদ নিয়ে চাকরি করার বিষয়টি ধরা পড়ার পরও তাকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত কবির হোসেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের আব্দুর রহমান ব্যাপারীর ছেলে।

নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, কবির হোসেন ২০১০ সালে পাস দেখিয়ে একটি নিবন্ধন সনদ (বিজ্ঞান) তৈরি করেন। ওই জাল সনদ দিয়ে তিনি ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং অবৈধ উপায়ে এমপিওভুক্ত হন। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করলেও তার জাল সনদের বিষয়টি কেউ জানতে পারেননি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়। নিরীক্ষা অধিদফতরের তৎকালীন অডিট অফিসার মো. মোকলেছুর রহমান ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষার সময় বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. কবির হোসেনের সনদের বিষয়ে তার সন্দেহ হয়। তিনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে যাচাইয়ের জন্য সেটি প্রেরণ করেন। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এনটিআরসিএ’র সহকারী পরিচালক ফারজানা রসুলের স্বাক্ষরিত পত্রে মো. কবির হোসেনের সনদটি নকল বলে জানানো হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. কবির হোসেনের (৩০৩০০০৪৫৬) নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয়। ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি এমপিওভুক্ত হন। ফলে ওই দিন থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সরকারি কোষাগার থেকে মোট ১০ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ টাকা গ্রহণ করেছেন, যা ফেরতযোগ্য। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়।

তবে এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত তাকে বেতন ও উৎসব ভাতা দেয়ায় কবির হোসেন ১২ লক্ষাধিক টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল কবির হেসেনের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। এরপরও বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কবির হোসেন সম্প্রতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, কবির হোসেন তার সনদ ঠিকঠাক করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করছেন। সনদ ঠিক করে তিনি ফিরবেন।

নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা আক্তার জানান মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত জুলাই মাস থেকে সহকারী শিক্ষক মো. কবির হোসেনের বেতনভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, সরকারের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য মো. কবির হোসেনকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এরপর লিখিত নির্দেশনা দেয়া হবে। তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। সনদ জালিয়াতি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।