কুষ্টিয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত মার্কেট অবৈধভাবে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এক শিল্পপতি। গত সোমবার বিকালে পৌর এলাকার বটতৈলে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির সামনের মার্কেটটি হঠাৎ করেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর স্থাপিত দোতলা মার্কেটের ২২টির অধিক পাকা দোকান কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়ারা।

আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় পেশিশক্তি ব্যবহার করে প্রকাশ্যে এমন তাণ্ডব চললেও কেউ টুঁ-শব্দ করেননি। ঘটনাস্থলে দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়াদের আহাজারি কারো মনে নাড়া দেয়নি। অভিযোগ উঠেছে সবাইকে ম্যানেজ করেই এমন তা-বলীলা চালিয়েছে ওই শিল্পপতি। মার্কেট মালিক পক্ষের অভিযোগ, জমিটি কিনতে নানাভাবে প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামরুজ্জামান নাসির। জমি কিনতে না পারায় পেশিশক্তি প্রয়োগ করে মার্কেটটি ভেঙে দিয়েছেন তিনি।

তবে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিকের দাবি, জেলা পরিষদের কাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিজ নিয়েছি। তাছাড়া অন্যসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর জেলা পরিষদ বলছে ওই জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা করেছে জেলা পরিষদ এবং জমিটি লিজ দেয়া হয়েছে। তবে উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা পরিষদ কিছুই জানে না। এদিকে একমাত্র সম্বল মার্কেটটি গুঁড়িয়ে দেয়ায় সর্বস্বান্ত মালিক ও দোকানের ভাড়াটিয়ারা।

নিজের উপার্জিত সমস্ত সম্বলের বিনিময়ে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল মৌজায় ১৯৯৫ সালে প্রায় ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন জনৈক রাকিবুল ইসলাম। ওই সম্পত্তির ওপর নির্মাণ করেন পাকা মার্কেট। তাতে দোকান রয়েছে ২২টি। প্রামাণিক সুপার মার্কেটের ওইসব দোকানে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিক কামরুজ্জামান নাসিরের ওই মার্কেটের ওপর নজর পড়ে। নানাভাবে মার্কেটের মালিককে তার কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন নাসির। কিন্তু তাতে সাড়া না দেয়ায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। জমিটি ব্যক্তিমালিকানা হলেও জেলা পরিষদের জমিটি তাদের বলে দাবি করতে থাকেন। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ ওই জমির মালিকানা দাবি করে কুষ্টিয়ার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলা দায়ের করেন।

দোকান মালিক রাকিবুল ইসলাম জানান, আরএস, সিএএস এমনকি এসএ রেকর্ড অনুযায়ী আমি জমির বৈধ মালিক। কিন্তু সম্পন্ন পেশিশক্তি প্রয়োগ করে মার্কেটটি ভাঙা হলো। কেএনবি’র নাসির ষড়যন্ত্র করে এটা করেছে। ও এই জমি কিনতে আমাদের অনেক অত্যাচার করেছে। আমি নিয়মিত সরকারকে জমির খাজনা দিয়ে আসছি।

মামলা চলমান অবস্থায় অবৈধভাবে ওই জায়গা কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামরুজ্জামান নাসিরের নামে লিজ প্রদান করে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ। ওই মামলা বিচারাধীন অবস্থাতেই সম্পন্ন বেআইনিভাবে সোমবার বিকালে হঠাৎ করেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় মার্কেটটি। তবে মোবাইলফোনে এক কর্মকর্তা জানান জেলা পরিষদের ওই সম্পত্তি লিজ দিলেও উচ্ছেদের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কেএনবি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জমিটি দখলে নিচ্ছে।

কুষ্টিয়া জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. মাহাতাব উদ্দিন জানান, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো অথরিটি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। সম্পন্ন বেআইনিভাবে মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। কামরুজ্জামান নাসিরের নামে জেলা পরিষদের দেয়া ওই লিজে দাগ নাম্বার থাকলেও কোনো খতিয়ান নাম্বার নেই। খতিয়ান নাম্বার না দেয়ার কারণ ওই খতিয়ান নাম্বারটি ব্যক্তি মালিকানাধীন।

কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাসির জানান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে আমাদেরকে লিজ দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আযম জানান, জেলা পরিষদের আয় বৃদ্ধির জন্য সিএস রেকর্ডিয় জমি দখল দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বলে জেলা পরিষদের সকল বেদখলীয় জমি পুনরুদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ওই জমিটি কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির নামে লিজ প্রদান করা হলেও উচ্ছেদের সঙ্গে জেলা পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। জেলা পরিষদ উচ্ছেদ করলে আমাদের লোক এবং মেশিন যেত। ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন আমাদের কোনো লোক অথবা মেশিন সেখানে ছিল না। তারা নিজেরাই দোকান ঘর উচ্ছেদ করেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।