২০১২ আইন  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা কে  বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চলছে সরকারি ও এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত কোচিং এর রমরমা বাণিজ্য। এই কোচিং নিজে পরিচালনা করছেন ঠাকুরগাঁও জেলা সদর সহ ৫টি উপজেলায় প্রশাসনিকভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি । ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে বিভিন্ন নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা । এরই মধ্যে  রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি ও এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা। কেউ চালিয়ে যাচ্ছেন সাইন বোর্ড, ব্যানার ঝুলিয়ে আর কেউবা নামের জোড়ে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোচিং-প্রাইভেট এর এসব বাণিজ্যের চিত্রের কাহিনী। সম্প্রতি কোচিং -প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধের জন্য রাণীশংকৈল কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশন নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলার প্রতিটি দপ্তরে গত ৫ মাস আগে অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেননি কোনো দপ্তর। অভিযোগ সূত্রে কোচিং সেন্টারগুলো হলো অগ্নিশিখা কোচিং সেন্টার, স্টার কোচিং সেন্টার, সবুজ সাইন্স কর্ণার, রেজাউল ইংলিশ টিচিং, সফিউল্লা প্রাইভেট টিচিং, পারভেজ ইংলিশ টিচিং সেন্টার, দুর্বার কোচিং সেন্টার, শাহানশাহ ইকবাল প্রাইভেট টিচিং, আলমাস প্রাইভেট টিচিং সেন্টার, উদয়ন কোচিং সেন্টার, কবির কোচিং সেন্টার, বুলু ইংলিশ টিচিং হোম, অর্ঘ্য কোচিং সেন্টার, সাকসেস কোচিং সেন্টার, মুনসেফ প্রাইভেট সেন্টারসহ নামে-বেনামে চলছে এসব কোচিং প্রাইভেট বানিজ্য।
এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকবৃন্দের কোচিং। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,রাণীশংকৈল পৌরশহরে ৪০ এর অধিক কোচিং সেন্টার নিজে পরিচালনা করে আসছেন শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। যার বেশির ভাগই শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ দ্বারা সরাসরি পরিচালিত এবং সম্প্রতি পৌরশহরের এক কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় হলরুমের মত একটি রুমে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পড়াশোনা। আর সেই কোচিং এর সামনে অপেক্ষারত এক অভিভাবক এর সাথে কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিত ভালভাবে পড়াশোনা না হওয়া এমনকি শিক্ষকদের গাফলাতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী কোচিং নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া উচিৎ। এতে শুধু অভিভাবকবৃন্দ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেনা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নানা রকম খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে অতিরিক্ত পড়াশোনার কারণে। শুধু ছাত্র/ছাত্রীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেনা অভিভাবকদের নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত চাপ-টেনশন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক অভিভাবক আক্ষেপের সাথে বলেন এ অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই। এ অভিশাপ থেকে কবে পাবো মুক্তি আমরা তার অপেক্ষায়। অভিযোগ পাওয়া যায় একেকটি কোচিং সেন্টার একেকজন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে ১০০০-১৫০০ টাকা। এমনকি কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই রমরমা কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য। এতে ঘুমের ব্যঘাত ঘটছে কোচিং সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের ।
এ বিষয়ে একান্নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক দূর্বার কোচিং সেন্টার এর পরিচালক বলেন, আমার কোচিং সেন্টারে দুই শিফটে ১০০জন ছাত্র/ছাত্রী পড়ছে। আরোও কথা হয় এক কোচিং সেন্টার মালিকের সাথে। তিনি জানান আগে কোচিং করাতেন কিন্তু এখন আর কোচিং করাননা। সেই শিক্ষকের কোচিং এর সামনে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় আসলেই সেই শিক্ষকেই সেই কোচিং এর পরিচালক। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে যে, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেননা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা ,রোল, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে।
নীতিমালায় আরোও রয়েছে , অভিভাবকদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে১৫০ টাকা নেওয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকরা এই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীর বিবেক এই শিক্ষাগুরুরা।
এখানে শেষ নয় ,শহরমুখী হচ্ছে গ্রামের ভালভাল শিক্ষকবৃন্দ শুধুমাত্র কোচিং- প্রাইভেট এর কারণে। এতে গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো ভাল শিক্ষকের অভাবে অচল হয়ে যেতে বসেছে। তাদের সাথে সেই গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হচ্ছে। এর ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রামের সেই দিনমজুর পিতা। এ ব্যপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকসেদুর রহমান বলেন, এর আগে মাসিক মিটিং এ আমি উপজেলার শিক্ষকদের কোচিং এর সাথে সম্পৃক্তনা থাকার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু এখনো যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার বলেন, উপজেলার সরকারি এমপিওভূক্ত যেসব শিক্ষক কোচিং-প্রাইভেট চালাচ্ছেন আমি উপজেলার স্ব স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিকট তাদের তালিকা চেয়েছিলাম কিন্তু তারা দেইনি। তার কারণে এ মূর্হূতে আমি ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ তালিকা প্রেরণ করলে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।