সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে অনেক ক্ষেত্রেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। অন্যদিকে যারা মনিটরিং করছেন তাদেরও অনেকে এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। ফলে মাঠপর্যায়ে মিলছে না সরকারের দেয়া প্রকল্পের সুফল। বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাতের এসব অভিযোগ আসছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের কারণে স্কুল ভবনের সংস্কার হয় না। ছাদের পলেস্তারা এখনো খসে পড়ে। অনেক স্কুলের জানালা বা দরজার পাল্লা নেই। জানালার গ্রিল ভাঙা। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে টয়লেট।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ক্ষুদ্র ও বড়ো মেরামত কাজ, বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ), রুটিন মেইনটেন্যান্স, প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস সজ্জিতকরণ, ওয়াসব্লক রক্ষণাবেক্ষণ, বই বিতরণ, শোক দিবস পালন, বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং আনুষঙ্গিকসহ আট ধরনের বরাদ্দ দেয়া হয়। স্লিপের জন্য শিক্ষার্থী ভেদে প্রতিটি স্কুলে বছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০-এর বেশি হলে ৭০ হাজার টাকা, ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ৮৫ হাজার টাকা এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০-এর বেশি হলে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় স্কুলে। এই বরাদ্দের অর্থ শিক্ষা কার্যক্রম, টিউবওয়েল মেরামত, আসবাবপত্র মেরামতসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু এ অর্থের অনেকটাই ব্যয় করেন না কমিটি। বিভিন্ন বিল ভাউচার দেখিয়ে এই অর্থের একটা বড় অংশ আত্মসাৎ করা হয়।

স্কুলের রুটিন মেরামতের জন্য বছরে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। প্রাক-প্রাথমিক ক্লাসরুম সজ্জিতকরণে বছরে ১০ হাজার টাকা, ওয়াসব্লক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ২০ হাজার টাকা, বড়ো মেরামত কাজে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা, বাউন্ডারি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা, বই বিতরণে ৪০০ টাকা, ক্রীড়া অনুষ্ঠানের জন্য ২ হাজার টাকা, শোক দিবস পালনের জন্য ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া আনুষঙ্গিক খাতে ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন নামের প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটিসহ প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটের কারণে মাঠপর্যায়ে মিলছে না সরকারের দেয়া প্রকল্পের সুফল। ফলে দিনের পর দিন ভোগান্তির মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান চলছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলেছেন, বরাদ্দের টাকা ছাড় করতে কর্মকর্তাদের উৎকোচ দেয়ায় তারা প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না। আর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দের টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এলেও এ বরাদ্দের অর্থ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। কিছু অসৎ এসএমসির সদস্য ঠিকমতো কাজ করেন না।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, যে স্কুলে কাজ না করার অসৎ উদ্দেশ্য থাকে এসএমসি ও প্রধান শিক্ষকের, সেখানে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদেরও ঘুষ নেয়ার সুযোগ থাকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সৌজন্যে ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।