ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তি নিশ্চিত ও সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর মিছিল ও সমাবেশ করলেও বাঁচানো গেলো না মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে। আজ বুধবার রাত সাড়ে ৯টায়  না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নুসরাত। তার ৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল।

মাদ্রাসা ছাত্রীর হত্যাচেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এবিকাল ৪.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা নগর শাখার সদস্য রুখসানা আফরোজ আশার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিপালী রানী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিলরুবা নূরী, নারীনেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্ত্তী, জেসমিন আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুক্তা বাড়ৈ।

বক্তাগণ বলেন, শুধু ফেনীর সোনাগাজীর এই বর্বরতায় নয়, সারাদেশেই নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই খুন-ধর্ষণ-অপহরণ-নির্যাতনের ঘটনা। একটি নির্যাতনের ঘটনা বিভৎসতায়, বর্বরতায় আগেরটিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও যেন গাঁ সওয়া হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে ১৮৯জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ১৫জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ৩জন ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় একজনকে হত্যা করা হয়েছে।

গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে চার-পাঁচজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে নুসরাতকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

এর আগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ- দৌল্লাহর বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল যৌন হয়রানির অভিযোগ করে ওই শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন ওই অধ্যক্ষ। নুসরাতের পরিবারের দাবী অধ্যক্ষের নির্দেশেই আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়ে হত্যার চেষ্টার মামলার প্রধান আসামী মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ- দৌল্লাহকে আজ বুধবার সাত দিনের রিমান্ড দেন আদালত। একই মামলার আসামি ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফছার হোসেন ও সহপার্টি আরিফুর ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক ।

একইদিনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করায় সোনাগাজী থানার ওসি থানার মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও হত্যাচেষ্টা মামলা তদন্তের জন্য পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

আমাদের বাণী-আ.আ.হ/মৃধা

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।