মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক; মাদকাসক্তি হচ্ছে সব অপরাধের মূল। একজন মানুষ যখন অপরাধজগতে পা বাড়ায়, প্রথম সিঁড়িটি হলো মাদকদ্রব্য। সিগারেট হলো মাদকাসক্তির মূল কারণ। একজন মানুষ প্রথমেই কিন্তু মাদক সেবন করে না। প্রথমে যেটা করে সেটা হলো সিগারেটের নেশা। এই নেশা থেকে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাদকের নেশায় আসক্ত বেশির ভাগই শুরু হয় বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে। মাদক গ্রহণের ফলে প্রাথমিক সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর মরণ ফাঁদ। এই মরণ ফাঁদে একবার পড়লে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যহানি বলতে কেবলই দৈহিক স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে না। দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ও বিধ্বস্ত হয় মনের স্বাস্থ্য, ক্ষয় হয় নৈতিক মূল্যবোধ, মাদক কেড়ে নিচ্ছে তরুণদের একাংশের সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনা। যার ফল সমাজ-জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে।
দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে এ অপব্যবসার শিকড় উৎপাটনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে ধ্বংসের স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। মাদকাসক্তির কারণে স্নায়ুতন্ত্র, হৃদ্যন্ত্র, যকৃৎ, ফুসফুস, প্রজননতন্ত্র, কিডনি, পাকস্থলীসহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিরায় মাদক গ্রহণের কারণে হেপাটাইটিস বি, সি, যৌনবাহিত রোগ ও এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু অনেক প্রচারণা সত্ত্বেও মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে না। বরং দিনকে দিন বাড়ছে। মনোভাবে পরিবর্তন না এলে কিছু হবে না। মাদকসক্ত সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া জরুরি। জনসচেতনতার বিকল্প নেই। মাদকের চাহিদা, সরবরাহ, চিকিৎসা অনেক দিক বিবেচনা করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। একক কোনো উপায়ে এ সমস্যার মোকাবিলা করা অসম্ভব। জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে হবে।