২০১৭ সালে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে টানা কয়েকদিন অনশনের পর এদিন সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ৪০জন প্রাথমিক শিক্ষক। যাদের মধ্যে ১৭ জনকে ঢাকা মেডিকেলে এবং কয়েকজনকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন সে সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান। অনশন ভাঙিয়ে তিনি আশ্বাস দেন, ‘দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব সমস্যার সমাধান হবে। আপনারা ফিরে যান।’

আন্দোলন ও মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের পর দেড় বছর কেটে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে নতুন মেয়াদে, বদল হয়েছে মন্ত্রীত্ব; পরিবর্তন হয়েছে প্রাথমিক অধিদপ্তরের অন্য সব পদও। কিন্তু সহকারি শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকা ঠিক ঘোরেনি। বরং সচিবের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের ১৩ মে’র বৈঠকে আরো ১ বছর (প্রায়) আশ্বাসের সীমা বাড়ানো হয়েছে।

নতুন ডেডলাইন ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ। সচিব আকরাম-আল-হোসেনের ভাষ্য, নিয়োগ যোগ্যতা উন্নীত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবার বেতন গ্রেডও উন্নীত হবে। তবে তা মুজিব বর্ষ থেকে অর্থাৎ ২০২০ সালে ১৭ মার্চের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে না বরং আগামীতে সহকারীরা শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হবেন।

সরকার সহকারীরা শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করলেও আজো বৈষম্য নিরসন করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, ২০১৭ সাল থেকে এ দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এ দাবিতে ফের আন্দোলনের কথা ভাবছেন তারা।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী ২১ জুন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক সভা ডাকা হয়েছে। এ সভা রাজধানীর মিরপুরের ওয়াকআপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

আলোচ্যসূচী অনুযায়ী সভায় সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড, গ্রেড পরিবর্তন প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা ও করনীয় ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য, জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুই ধরণের শিক্ষক রয়েছেন- ১. প্রধান শিক্ষক ২. সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে পাঠদানের মূল কাজটি করেন সহকারী শিক্ষকেরা। অথচ বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতন গ্রেডের পার্থক্য চার ধাপ। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন দশম গ্রেডে (১৬০০০ টাকা স্কেলে, কোর্টের রায় অনুসারে যেহেতু বকেয়াও পাবেন) এবং সহকারী শিক্ষকেরা বেতন পান ১৪নং গ্রেডে (১০২০০ টাকা স্কেল)।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।