বেশ কয়েকবছর আগেই শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও একটি ইউনিক আইডি কোড দেয়ার মাধ্যমে ভর্তি, বদলি, বৃত্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি, রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বিবাহসহ বিভিন্ন কাজে তা ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয় নি। তবে, আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ।

জানা গেছে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও একটি ইউনিক আইডি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে সকলস্তরের শিক্ষার্থীদের এর আওতাভূক্ত করার কথা বলে হয়েছিল তখন। প্রকল্পটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ব্যানবেইসকে।

পরিকল্পনা ছিল, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হলে তার তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে সংযুক্ত হবে। ফলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাওয়া সহজ হবে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য থাকলে ভবিষ্যতে তারা যখন উচ্চ শিক্ষায় যাবে তখনও তাদের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা সরকারের জন্য সহজ হবে। এছাড়া বয়স পরিবর্তনের যে ঝামেলা সেটা থেকেও মুক্ত থাকা যাবে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে নয়টি অঞ্চলে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন ব্যনবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ। কিন্তু আজও বাস্তবায়ন হয়নি সে উদ্যোগ।

তবে, পুরানো সেই উদ্যোগ আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে বলে ফের দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ। তিনি জানান, সমন্বিত ‘শিক্ষা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রোজেক্ট’ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডাটাবেস ও ইউনিক আইডি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৩১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নেয়া এ প্রকল্পের আওতায় আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি প্রদান করা হবে। আর এ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ পরিচালনা করবে ব্যানবেইস।

ব্যানবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ জানান, সব প্রতিষ্ঠানকে এক করে একটি সিস্টেমের ভিতর নিয়ে আসা হচ্ছে। এ সিস্টেমের আওতায় শিক্ষার্থীরা একটি ইউনিক আইডি পাবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ সহজ হবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের মত সনাক্তকরণ নম্বরটি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজে লাগবে। শিক্ষার্থীর সব তথ্য এ নম্বরের মাধ্যমে একটি ডাটাবেইসে পাওয়া যাবে।

ফসিউল্লাহ আরও জানান, একটি শিশু যখন স্কুলে ভর্তি হবে তখন তার সব তথ্য সে দিয়ে দেবে। এ তথ্য ডাটা বেইসে জমা করে তাকে একটি ইউনিক আইডি দেয়া হবে। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য তার বাবা-মার তথ্যের সাথে অনলাইনে মিলিয়ে নেয়া হবে। পরবর্তীতে সে যখন কোন পাবলিক পরীক্ষার ফরমপূরণ করতে যাবে বা অন্যে যে কোন কাজে শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডিটির মাধ্যমে ডাটাবেইস থেকে তার তথ্য বেড়িয়ে আসবে। নতুন করে তথ্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন নাই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব তথ্য একষাথে পাওয়া যাবে।

এছাড়া আগামী বছর থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব তথ্য যেমন সারাদেশের প্রতিটি শ্রেণির আলাদা আলাদা শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি, পরীক্ষাসহ সব কিছুর তথ্য অনলাইনে ‘লাইভ তথ্য’ অনলাইনে পাওয়া যাবে বলেও দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।