ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ছেলেটিকে আজ একাত্তর টিভিতে একটা টকশোতে ডাকা হয়েছিলো। ছাত্রলীগের ছেলে পেলেদের বর্তমানে আমি মাথামোটা খুনী ও সন্ত্রাসী বলেই মনে লালন করি কিন্তু এই রিয়াদ ছেলেটিকে আমার ভয়াবহ লোমহর্ষক মনে হোলো। এই ছেলেটি শারিরীকভাবে বেশ চওড়া ও ভারী হলেও এর মাথা খুব ঠান্ডা। অনেকটা ভয় পেয়ে বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেবার মতন।

টিভিতে ঠান্ডা মাথায়, অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে কয়েকটি টার্ম সে ব্যবহার করছিলো যেটা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কেউ মন না দিয়ে শুনলে বুঝবে না। আরেকটু ব্যাখ্যা করি-

ইয়াজ তার বক্তব্যে যা বলেছে সেটির একটি সারমর্ম আমি পাঠক/পাঠিকাদের কাছে তুলে ধরছি-

(১) অভিযুক্ত ছাত্রলীগের খুনীরা পূজা দেখতে গিয়েছিলো। সেখানে তারা মদ পান করে এবং মদ পান করে এসে তারা আবরার কে পেটায়।

(২) আবরার আগে থেকেই অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলো (ইয়াজ জটিল রোগটার নাম বলে নেই)

(৩) ছাত্রলীগের ছেলেরা আবরারকে পেটাবার পরেও নাকি তিনি বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ইয়াজ সাহেবের কথা হচ্ছে আবরারের বন্ধুরা এটি দেখার পরেও কেন আবরারকে হাসপাতালে নেয় নি? আর এই নেয়নি বলেই নাকি আবরার মারা গেছে।

শেষের পয়েন্ট টার মানে দাঁড়ালো এখানে আবরারের বন্ধুদের ডিউটি ঔড হয়েছে আবরারের প্রতি। ফলে সেই দায়িত্ব পালনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন সুতরাং তারাও (মানে আবরারের বন্ধুরাও) দায়ী। এটি-ই ইয়াজ বলতে চাইছে।

লক্ষ্য করে দেখুন শুরুর বক্তব্যটা। মানে খুনীরা মদ্যপ ছিলো। মাতাল ছিলো। খুনের মামলার এটি অনেক বড় একটা ডিফেন্স। ইন্টক্সিকেইটেড ছিলো কি ছিলোনা।

অর্থ্যাৎ যেহেতু খুনীরা মদ্যপ ছিলো সেহেতু তারা সাধারণ মেন্টাল স্টেইটে ছিলোনা ফলে এটি সামনের সময়ে, মানে ট্রায়ালের সময় এদের একটা ডিফেন্স হিসেবে ব্যবহার যে করা হবে সেটির একটা ইংগিত কিন্তু ইয়াজ ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে দিয়ে দিয়েছে।

আরেকটা কথা এখানে অনিবার্য ভাবেই এসে যায় যে, ইয়াজ কি এই ছেলেদের ব্রিদিং পরীক্ষা নিয়েছেন? রক্ত পরীক্ষা করেছেন? কিংবা এই ঘটনার তদন্ত করেছেন? কিসের ভিত্তিতে তিনি এই অভিযুক্তদের মদ্যপ বলছেন? কিভাবে তিনি নিশ্চিত হলেন কোনো টেস্ট রিপোর্ট, নিরীক্ষা ছাড়া?

হিসেব অনুযায়ী এই মামলার তদন্ত ইয়াজের হাতে থাকার কথা না, তাহলে ঠিক কিসের ভিত্তিতে লাইভ টিভিতে এসে ইয়াজ এই খুনের মামলার ডিফেন্স সুক্ষ্ণ ভাবে নিয়ে আসেন? কেউ কি রয়েছেন এই প্রশ্নের উত্তর দেবার?

আবার লক্ষ্য করুন ইয়াজ বলছে আবরারের একটা জটিল গোপন রোগ ছিলো। মানে দাঁড়াচ্ছে আবরারের এই রোগটার ফলেই কি মৃত্যু হয়েছে, মানে এই রোগটাই কি সেই সময় অপারেটিভ ছিলো কিনা। অর্থ দাঁড়ায়, আবরারের সেই জটিল রোগের কারনে “অল্প মারের” কারনেই সে মরে গেছে। মানে এখানে অল্প মার দায়ী নয়, রোগটা দায়ী। জানিনা ইয়াজ জানে কিনা সেই বিখ্যাত জেহোভা উইটনেস মামলার কথা।

“ইউ হ্যাভ টু টেইক ইউর ভিক্টিম এজ ইউ ফাইন্ড হিম”

এরই মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি খুনীদের আইনজীবি আদালতে বলেছে আবরারের গায়ে যে পেটানোর চিহ্ন রয়েছে সেটি চর্ম রোগ এর দাগ কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। লক্ষ্য করুন, ইয়াজ আর খুনীদের আইনজীবিদের লাইন একই।

আবার অন্যদিকে আবরারের বন্ধুদের উপর দোষ ধাবিত করে, ডিউটি ঔড করবার ইংগিত, ডিউটি অব কেয়ারের ইংগিত, একই সাথে কজেশন ব্রেক হয়েছে এমন কথা বার্তার ইংগিত খুব সুক্ষ্ণ।

আমি জানিনা ইয়াজ ছেলেটি আইনের ছাত্র কিনা। আইনের ছাত্র হলে বলতে হবে ছাত্রলীগ একটা ঠান্ডা মাথার খুনী এপোলজিস্ট জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে হাতুরী বাহিনীর সাথে সাথে।

অনেকেই বলছেন ছাত্রলীগ কি এই হত্যাকে সমর্থন করেছে কেন্দ্রীয়ভাবে? তাহলে কেন ছাত্রলীগকে কেন দোষা দিচ্ছেন…ব্লা ব্লা ব্লা…

আইনজীবি বলেই হয়ত এই টকশো-এর বক্তব্যগুলো আমি ধরতে পারলাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ? অনেকেই কিন্তু ইয়াজের এই ইন্ডাইরেক্ট কচলানো বুঝতে পারেনি। সবাই দেখবে বিচার হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে কিন্তু ফাঁসীর দড়ি থেকে মুক্ত করবার রশদ ইতিমধ্যেই যোগার করা হয়ে গেছে।

মদ্যপ, আবরারের জটিল গোপন রোগ ছিলো, বন্ধুরা বাঁচাতে আসেনি কেন… এইসব সুক্ষ্ণ কথার মার প্যাঁচ আমার বক্তব্যকেই জোরালো করে।

লেখক, নিঝুম মজুমদার (ফেসবুক থেকে)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।