মোঃ খলিলুর রহমান একজন প্রধান শিক্ষক। বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন আমেরিকায়। স্কুলের কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকলেও তার পক্ষে যথারীতি নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। এ নিয়ে গফরগাঁওয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারী দলের লোক বিধায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তার বড় ভাই। কমিটির রেজুলেশনে চিকিৎসা ও অর্জিত ছুটি দেখিয়ে তিনি দফায় দফায় বিদেশে গিয়ে অবস্থান করছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের আপত্তি থাকলেও কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

গফরগাঁও উপজেলার যশরা ইউনিয়নের আঠারদানা (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। জানা যায়, তিনি বর্তমানে নিউইয়র্ক এর ৫/বি জ্যামাইকা স্টেট এর ১৬৪/৩, ৮৯/ এ, ভি, ই এ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন। সূত্র মতে, ১৯৯৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর খলিলুর রহমান স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ১ জুলাই তিনি ডিভি লটারি নিয়ে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২ বছর ৮ দিন অবস্থান করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই স্কুলে যোগদান করেন। এর এক বছর ৪ মাস ২৩ দিন পর তিনি ফের আমেরিকায় চলে যান এবং ২ বছর পর ২০১৬ সালে ফিরে এসে পুনরায় চাকরিতে যোগ দেন। সর্বশেষ চলতি বছর ১৫ জুন তিনি আমেরিকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন কিন্তু ওই তারিখে না গিয়ে ২ জুলাই তিনি আমেরিকা যাত্রা করেন। জানা যায়, এবার আমেরিকা যাত্রার আগে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ২ জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত হাজিরা খাতায় অগ্রিম দস্তখত করে গেছেন। একই সঙ্গে ৫ জুন সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে সহকারী শিক্ষক মফিজুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার দিয়ে যান।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, তিনি শিক্ষক/শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের সরকারী বেতন ও ভাতাদির বিবরণীতে প্রবাসী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে বেতন ভাতাদির টাকা উত্তোলন করছেন। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান কিভাবে ও কোন ছুটি ভোগ করে আমেরিকা গেলেন তা আমি বলতে পারব না। সূত্র মতে, এর আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানান, স্কুল পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে ছুটি নিয়ে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান আমেরিকায় অবস্থান করেন। তবে তিনি জানান, বেতন ভাতা তোলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। সহকারী প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে কেন একজন জুনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হলো এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের বড় ভাই মোঃ হামিদুর রহমান আঠারদানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তিনি অবশ্য বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান চিকিৎসা ও অর্জিত ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সূত্র মতে, প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের ইনডেক্স নম্বর- ২৮১৫১২, অগ্রণী ব্যাংক শাখায় তার একাউন্ট নম্বর- ১১২৪২, কোড নং- ৭, বেতন স্কেল- ২৯০০০ টাকা, ২০১১ সালের পর থেকে দফায় দফায় আমেরিকায় মাসের পর মাস অবস্থান করে ও গফরগাঁও অগ্রণী ব্যাংক শাখা থেকে নিয়মিত বেতন তুলছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান। সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বিষয়টি জেনে ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গফরগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, আঠারদানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের বিদেশে গমন প্রবণতা সম্পর্কে বারবার নিষেধ করা হয়। তিনি বেশির ভাগ সময় স্কুলে অনুপস্থিত থাকছেন। সর্বশেষ এ বছর জুন থেকে শুরু করে নবেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীদের মাসিক উপস্থিতি প্রতিবেদনে তার স্বাক্ষর নেই। তবে তিনি কিভাবে বেতনের টাকা উত্তোলন করছেন সেটা ব্যাংক বলতে পারবে। বেতন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে জানান, আমাদের এখানে বাহকের মাধ্যমে (বেয়ারার) চেক নিয়ে আসে আমরা ওই একাউন্ট থেকে টাকা দিতে বাধ্য থাকি। প্রধান শিক্ষক আমেরিকা অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার পরিবার সূত্রে জানায় অচিরেই তিনি দেশে ফিরবেন।

আঠারদানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের পরিবারের লোকজন ক্ষমতাসীন দলের লোক। তিনি ডিভি কার্ড নিয়ে আমেরিকায় প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন আর মাঝে মাঝে দেশে ফিরে কিছুদিন চাকরি করে ফের আমেরিকায় চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সূত্র মতে, এক্ষেত্রে নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটলেও দেখার কেউ নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।