সরকারি বেসরকারিসহ বিভিন্ন চাকরিতে বদলি ব্যবস্থা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করায় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সম্প্রসারিত হয়। চাকরি জীবনে বদলি ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান ও সেবাগ্রহীতা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা নেই। বেশ কয়েকবার এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে দ্রুত বদলি প্রক্রিয়া চালু করা দরকার। এমপিও নীতিমালা ২০১০ ও ২০১৮ তে উল্লেখ আছে, ‘সরকার চাইলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু করতে পারবে’।

শিক্ষা ব্যবস্থায় যত উন্নয়ন হয়েছে সব সরকার ও শিক্ষকদের মাধ্যমে। ম্যানেজিং কমিটির প্রয়োজন নেই বলেই সরকার শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে দিয়েছে ও ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা খর্ব করেছ। ফলে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সরকার প্রশংসিত হয়েছে ও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বদলি ব্যবস্থা চালু করা ও নীতিমালা প্রণয়ন নিঃসন্দেহ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা লক্ষাধিক শিক্ষকের প্রাণের দাবি। কিন্তু বদলি নীতিমালা খসড়ায় ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব দেয়ার সংবাদ অনভিপ্রেত। যদি তাই হয়ে থাকে তবে নিশ্চিত নিয়োগ বাণিজ্যের পরিবর্তে এবার বদলি বাণিজ্য শুরু হবে। তাই বদলির ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা বাতিল করে সরকারের অধীনে অটো বদলি সিস্টেম চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন আন্দোলন, স্মারকলিপি ও লেখালেখির মাধ্যমে বদলি চেয়েছি। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে বদলি; এমন বদলি আমরা চাইনি।

৯৫ শতাংশ শিক্ষক বদলি ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী সময় থেকে বদলি বিষয়ক আলোচনা শুরু হলো, সিদ্ধান্ত হলো, নীতিমালাও জারি হলো। কিন্তু আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে অসংখ্য শিক্ষক বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।

বদলি ব্যবস্থা না থাকায় অন্য বিভাগে; নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরে চাকরি করার ফলে নিজের পরিবারের কাছে থাকতে পারেছেন না অনেক শিক্ষক, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবাও করতে পারছেন না। স্বল্প বেতনে দূরে চাকরি করার অর্থাভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অনেক শিক্ষক।

বদলি ব্যবস্থা না থাকায় চাকরির নিরাপত্তা নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু শিক্ষক দুর্নীতি, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন। আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশে বদলি ছাড়া এরকম কার্যক্রম চলতে পারে না। একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে অনেকে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত হচ্ছেন; যা সকল শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে। কিছু শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে গড়ে ওঠছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা, গাইডবুক ও নোটবাণিজ্য করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পেছনে শ্রম ও মেধা দিতে অনিহা বা ব্যর্থ হচ্ছেন।

বর্তমানে কোচিং বাণিজ্য দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। কিছু শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকায় প্রশ্নফাঁসের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। একমাত্র বদলি ব্যবস্থা চালু হলেই এসব দুর্নীতি বন্ধ হতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতিমালায় পরিচালিত হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে পেশিশক্তি প্রয়োগের ফলে সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বদলি না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিকুল পরিবেশ না সৃষ্টি হলেও একইভাবে চলছে পাঠদান। ফলে দেশ, জাতি, শিক্ষক ও সর্বস্তর জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষক কর্মচারী অপরাধ করলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন কমিটিকে হাত করে। আবার কোনো অপরাধ না করেও বহিষ্কার ও চাকরিচ্যুত হচ্ছেন কোনো কোনো শিক্ষক। বদলি ব্যবস্থা থাকলে তাকে অন্যত্র বদলি করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যেত। এতে অনেক শিক্ষকরাও ন্যায় বিচার পেতেন। তাই, শর্তসাপেক্ষ হলেও সরকারের উচিত বদলি ব্যবস্থা চালু করা।

সরকার যখনি বদলি ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেন তখনি গুটিকয়েক শিক্ষক ও নামধারী শিক্ষক নেতা বা সংগঠন বদলি ব্যবস্থা চালুর বিরোধিতা করে আসছে। তারা তাদের অসাধু কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের মহতি উদ্যোগ বদলি ব্যবস্থা যাতে চালু হতে না পারে সে জন্য অপচেষ্টা করেন। সরকারের উচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও সীমাহীন দুর্নীতি রোধে দ্রুত বদলি প্রজ্ঞাপন ও বাস্তবায়ন করা। বদলি ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের কোনো বাজেট বরাদ্দ বা অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র যেন বদলি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা কার্যকরে সরকারকে বাধা দিতে না পারে এটাই ৫ লক্ষ বেসরকারি শিক্ষকদের কামনা।

সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত বছর বলেছিলেন, কর্মস্পৃহা ও একগেয়েমি রোধে শীঘ্রই বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু হবে। তখন শিক্ষকরা আশার আলো দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বদলি ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ায় শিক্ষকরা হতাশ হলেন। এমপিও নীতিমালা ২০১৮ তে সুস্পষ্ট লেখা আছে ‘ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবে ও বয়স শিথিলযোগ্য’। কিন্তু সে সুযোগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অসংখ্য প্রার্থী। বদলি ব্যবস্থার পাশাপাশি ইনডেক্সধারীদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গণ্য করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ মাউশি কিংবা এনটিআরসিএ কিংবা অধিদপ্তরের অধীনে সরাসরি বদলি নীতিমালা জারি করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করুন। শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে বদলি নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

লেখক: প্রভাষক (ইংরেজি,) সমষপুর কলেজ, দোগাছি, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।