এসটিআরসিএ`র (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ) গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখের প্রথম ধাপের একটি সুপারিশপত্র পেয়ে ৬ মার্চ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (আইসিটি) পদে যোগদান করেন মো. কাজী সাইফ উদ্দিন। কিন্তু গত ২৯ মে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের প্রেক্ষিতে এই স্কুলে একই পদে এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগের জন্য হাজির হন আরেক প্রার্থী। তখনই বাধে বিপত্তি। প্রতিষ্ঠান প্রধান এ বিষয়টি অবগত করেন এনটিআরসিএকে।

এনটিআরসিএ এর তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব দেন মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তাকে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে গিয়ে সাইফ উদ্দিনের কাগজপত্র এবং সুপারিশপত্র যাচাই বাছাই করেন। মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকতার্র কাছে এসময় তার কাগজপত্র ভুয়া বা জাল বলে মনে হয়নি।

পরবর্তিতে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ সাইফ উদ্দিনকে কাগজপত্র নিয়ে এনটিআরসিএ দপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য তলব করেন। গত ২৬ নভেম্বর মূল কাগজপত্র নিয়ে এনটিআরসিএ দপ্তরে হাজির হন সাইফ উদ্দিন। এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ সাইফ উদ্দিনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রমান করে যে সাইফ উদ্দিনের সুপারিশপত্রটি ভুয়া। এসময় সাইফ উদ্দিন স্বীকারোক্তিমূলক একটি লিখিত জবানবন্দিও প্রদান করে । এসময় তার নিবন্ধন সদনপত্র জব্দ করে। এরপর সাটিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে তাকে রমনা থানায় সোপর্দ করে এনটিআরসিএ। কিন্তু সাইফ উদ্দিনের কাগজপত্র দেখে এবং তারা কথাবার্তা শুনে মামলা নেবার বিষয়ে দ্বিধায় পড়ে যান থানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএ`র সাথে কথা বলেন থানা কর্তৃপক্ষ। এরপর এনটিআরসিএও দ্বিধায় পড়ে যান । পরে একজন উকিলের জিম্মায় থানা থেকে ছাড়া পান সাইফ উদ্দিন।

গত ৩ ডিসেম্বর সাইফ উদ্দিনের বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএ অফিসে এনটিআরসিএ`র চেয়ারম্যান, হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুনরায় সাইফ উদ্দিনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হয়। শেষে প্রমানিত হয় যে সাইফ উদ্দিনের দাখিলকৃত সুপারিশপত্রটি ভুয়া।

হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ (ভারপ্রাপ্ত)  জানান, আমাদের তদন্তের সময় সাইফ উদ্দিনের দাখিল করা সুপারিশপত্র বা কাগজপত্র দেখে মনে হয়নি যে এটি জাল বা ভুয়া। আর এ ব্যাপারে আমাদেরও বেশি যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। সুপরিশপত্র সংক্রান্ত এসএমএসটি একমাত্র প্রার্থীর মোবাইল নাম্বারেই পাঠানো হয় । তারা এসএমএসের মাধ্যমে এনটিআরসিএ থেকে প্রাপ্ত ইউজার আইডি পাসএয়ার্ড ব্যবহার করে সুপারিশপত্র প্রিন্ট করে উল্লেখিত স্কুলে গিয়ে দাখিল করেন। পরে প্রধান শিক্ষক ম্যনেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, সুপারিশপত্রের বিষয়টি সম্পর্কে যদি সুপারিশপ্রাপ্তদের পাশাপশি আমরাও অবহিত থাকতাম তাহলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না। এমনকি কোন স্কুলে কতজন শিক্ষকের পদ খালি আছে তাও আমরা জানিনা। এই তথ্য বা চাহিদাপত্র পাঠানো হয় স্কুল থেকেই । যেমন এই স্কুল থেকে ৫জন আইসিটি শিক্ষকের চাহিদা পাঠানো হয়েছিলো। যদিও তাদের প্রাপ্যতা একজন আইসিটি শিক্ষকের।

কাজী সাইফ উদ্দিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন, অনলাইনে কারো সুপরিশপত্র দেখা যায়না। এনটিআরসিএ সুপারিশপত্র প্রেরণের কয়েকদিন পরই সাইট থেকে ডিলিট করে ফেলে। শুধু সুপারিশপত্রের নোটিশ এবং স্কুলের তালিকা দেখা যায়।

শুধু সুপারিশপ্রাপ্তরাই জানতে পারে তিনি কোন স্কুলের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আর সাইফ উদ্দিন এই বিশ্বাস থেকেই হয়তো ভাবছিলেন যে তার জালিয়াতি ধরা পড়বে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, আগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বাস করে ব্যক্তিগত ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে সা্ইফ উদ্দিনের মাধ্যমে কিছু কাজ করাতো। আর এই সুযোগে হয়তো সে ভুয়া সুপারিশপত্র তৈরি করে থাকতে পারে। আইসিটি বিষয়ে ৫ জন শিক্ষকের চাহিদা প্রেরণের বিষয় তিনি বলেন, একটি কম্পিউটার দোকান থেকে এই চাহিদাপত্রটি পাঠানো হয়েছিলো। দোকানদার ভুল করে ১টির স্থলে ৫টি দিয়েছিলো।

উল্লেখ্য এনটিআরসিএর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকের মোবাইল নম্বরে একটি ইউজার আইডি এবং পাস ওয়ার্ডসহ একটি এসএমএস প্রেরণ করে থাকে। সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক Applicant’s Section-এর Appointment and Joining এ গিয়ে Application ID এবং Mobile No দ্বারা লগ-ইন করে তাঁর নিয়োগপত্র পেয়ে থাকেন। পরবর্তিতে ওই সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগদান করেছেন কিনা (হ্যাঁ/না) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান সকল তথ্য প্রদান করে থাকেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।