জাতীয় সংসদে এমপিওভুক্তির বাজেট পেশ করায় প্রথমেই ধন্যবাদ রইল দেশরত্ন, শিক্ষানুরাগী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। দীর্ঘ ৮ বছর পর এমপিও বাবদ বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি সারা দেশের নন-এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য এক বিশাল মাইলফলক। আশা করা হচ্ছে অতিদ্রুই তা কার্যকর করা হবে।

কিন্তু একটি বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নীতিমালা। কেননা এমপিওভুক্তির এ শর্ত বর্তমান সময়ে পালন করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। কারণ, দীর্ঘদিন সরকারি অনুদান তথা এমপিও না হওয়ার কারণে দেশের অধিকাংশ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। সরকারি অনুদান বা শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই চলতে পারে না।

তারপরও ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো রকমে মুষূর্ষু অবস্থায় বেঁচে আছে। দীর্ঘদিন পর এমপিওভুক্তির সময়ে এসে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নানাবিধ নীতিমালা, শর্ত চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। কারণ, প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি সব বিধি-বিধান মেনেই অনুমোদন পেয়েছিল। ঐ সময় যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হয়েছিল তারাও একই নিয়মের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অতএব দীর্ঘদিন আগে প্রতিষ্ঠিত অনুমোদিত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর হঠাৎ করে নতুন কোনো নিয়ম বা শর্তই প্রযোজ্য নয়। বিষয়টি খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়।

যুগ যুগ পর হঠাৎ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংখ্যা বা পাশের হার কাঙ্খিত না হওয়ায় এমপিও থেকে বঞ্চিত করা অহেতুক, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ দীর্ঘদিনের এসব প্রতিষ্ঠান যখন স্বীকৃতি পেয়েছিল সে সময় স্থান, কাল এবং চাহিদার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছিল। সুতরাং ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে নতুন এমপিওভুক্তিতে পাশের হার আর শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি বা অনুমোদনের জেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমগ্র দেশের মাত্র ৫ হাজার ২৪২ টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিভক্তির ঘোষণা দেয়া উচিত। এমপিওভুক্তির পর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত প্রযোজ্য করা যেতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই।

এমনিতে যুগের পর যুগ এমপিও অভাবে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর ও দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে, তার ওপর বর্তমান সরকারের আমলে ৮ (আট) বছর একটানা এমপিওভুক্তি বন্ধ ছিলো। দীর্ঘ ৮ বছর পর এখন আবার এমপিওভুক্তির নতুন শর্ত, নীতিমালা হতাশ করছে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারীকে। তাছাড়া স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের একই নিয়ম মেনে বর্তমানের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের এমপিও পেতে নিয়মের এমন ব্যত্যয় ঘটেনি। একই দেশে দুই রকম নিয়ম চলতে পারে না!

তাছাড়া দেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা, রেজিস্ট্রেশন করা, স্বীকৃতি পাওয়া, অবকাঠামো তৈরি করা খুব সহজ নয়। বেতনহীন শিক্ষকদের অসীম ধৈর্য, অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ আর মহিমার মূল্যায়ন করা উচিৎ। পরিশেষে জীবন ও যৌবন প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করে যখন একজন শিক্ষক এমপিও থেকে বঞ্চিত হবেন তখন এর চেয়ে দু:খজনক পৃথিবীর আর কিছুই হতে পারে না। অনুধাবন করুন, নন-এমপিও এসব শিক্ষক এদেশেরই শিক্ষিত সন্তান, এদেশেরই মানুষ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসীম সাহসী এবং শিক্ষানুরাগী। আমরা জানি, এক ঘোষণায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ২৬ (ছাব্বিশ হাজার) বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। উল্লেখ্য পরবর্তীতে দেখা যায়, এই ২৬ হাজার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশের কাঙ্খিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদার থেকেও একটু বেশি। প্রয়োজনীয়তার বাহিরে এবং অযোগ্য, নাম সর্বস্ব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও সে সময় সরকারি করা হয়।

যাহোক আমরা জানি, দেশে স্বীকৃত ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যদিও এমপিওভুক্তির আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি। মূলত দীর্ঘদিনের অবহেলিত, বঞ্চিত ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য নন-এমপিও ফেডারেশন আন্দোলন করে আসছে। এরপর বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক পরে। অতএব এই ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারী এখন মাননীয় শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন এমপিওভুক্তির ঘোষণার অপেক্ষায়। অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরাশ করবেন না। আমাদের শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সাহসী এবং দক্ষ। অধিকন্তু, সকল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস রয়েছে।

অতএব স্বীকৃত ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত এমপিওভুক্তির ঘোষণার জন্য নন-এমপিও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিনীত নিবেদন করছি।

লেখক: শিক্ষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।